Bangla Runner

ঢাকা , বুধবার, ২২ মে, ২০২৪ | বাংলা

শিরোনাম

সনাতনী বিতর্কের নিয়মকানুন গ্রীষ্ম, বর্ষা না বসন্ত কোন ঋতু সেরা?  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ই-মেইল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫ মসলা Important Quotations from Different Disciplines স্যার এ এফ রহমান: এক মহান শিক্ষকের গল্প ছয় সন্তানকে উচ্চ শিক্ষত করে সফল জননী নাজমা খানম ‘সুলতানার স্বপ্ন’ সাহিত্যকর্মটি কি নারীবাদী রচনা? কম্পিউটারের কিছু শর্টকাট ভালো চাইলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করুন

একজন নেপথ্য নায়কের সঙ্গে আমার পরিচয়

এম.এস.আই খান
মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ Print


35K

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে ১৯৭২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে শারমিন আহমদ নিজের জন্মদিনে কবির কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু চিঠি লেখার পড়ে তিনি জানলেন কবি বহু আগেই এই বৈষম্যের পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। একইভাবে একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে শহর থেকে বহু দূরে বিদ্যুতের আলোহীন অবহেলিত এক গ্রামে বসে আমার সঙ্গে পরিচয় ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেপথ্য নায়ক বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে। তবে সেটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্য বইয়ের  à¦®à¦¾à¦§à§à¦¯à¦®à§‡à¥¤ যেখান থেকে আমি সর্ব প্রথম জানতে পারি, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী  à¦›à¦¿à¦²à§‡à¦¨ তাজউদ্দীন আহমদ। কিন্তু যতদিন এই নেপথ্য নায়কের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটল ততদিনে তিনি এই প্রতারণা ও ছলনায় ভরা পৃথিবী থেকে বহু দূরে ঘাঁটি গেড়েছেন।

এরপর মাধ্যমিক জীবন এবং কলেজ জীবন কেটেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিস্তারিত কোন ইতিহাস সেখানে ছিল না। তবে এই সময়ের মধ্যে শুধু এটুকু জানতে পারি ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’ স্লোগান ধারণ করা পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় সেই কারাগারের মধ্যে নির্মমভাবে ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কলেজ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বক্তাদের বলতে শুনেছি ‘স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাকে’ কিন্তু এই জাতীয় চার নেতার জীবন ও কর্ম নিয়ে বিস্তারিত কারো মুখে শুনিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে আমি ছাত্র হলাম ইতিহাসের। দেশ-বিদেশের, যুগ-যুগান্তরের বহু ঘটনা জানা হল, পড়া হল। এরপর যখন বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে বসলাম তখনও জাতীয় চার নেতার অবদান ও তাদের ভূমিকা সম্পর্কে আংশিক কিছু ধারণা পেলাম। বলা যায় খুবই কম। তবে জানার পরিধি বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড”। ২০১৮ সালের সম্ভবত জুলাই মাসে ফাঁকা পকেটে ক্যাম্পাসে ঘুড়ে বেড়ানোর সময় দেয়ালে চোখ আটকে যায়। যেখানে তাজউদ্দীন আহমদের উপর লেখা আহ্বান করা হয়েছিল। 

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করার কারণে পকেটে থাকা নোটবুকে আমি বিষয়টি টুকে নেই এবং পরেরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সেমিনার কক্ষে এ সম্পর্কিত কিছু বই দেখতে যাই। কয়েকটা বই উল্টে-পাল্টে মনে হল আমি যদি বইগুলো কিনে ফেলি তাহলে বইগুলোতে নিজের মত দাগাতে পাড়ব এবং সারা জীবন বইগুলো কাজে দেবে রেফারেন্স বই হিসেবে। বান্ধবির থেকে হাজার তিনেক টাকা ধার নিয়ে আমি ছুটে গেলাম শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র, প্রথমা প্রকাশন এবং বাংলা বাজারের বেশ কয়েকটি প্রকাশনীতে। বেশ কিছু বই সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করলাম। এই পাঠের মধ্য দিয়ে আমি এক অনন্য নেতাকে আবিষ্কার করলাম। এক অজানা অধ্যায়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটল। বঙ্গতাজের নেতৃত্বগুণ, তার দৃঢ়তা, তার সততা, তার কর্তব্য নিষ্ঠা, তার উদারতা, তার মেধা আমার হৃদয় ছুঁয়ে দিল।

‘‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’’- কবি কুসুম কুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতার এই অংশটি আমার বারবার মনে পড়তে লাগল তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে পড়ার পর। আমার মনে হচ্ছিল- এমন ছেলে তো এ দেশে এসেছিল। যে ছিল সত্যিই আদর্শবান। যিনি নিজের জীবন দিয়ে নিজের আদর্শ, নিজের সততার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। বেঈমানী-প্রতারণা যার মস্তিষ্কে কখনোই বাসা বাঁধতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গতাজের সামনে পথ ছিল দুটি- এক দিকে মন্ত্রীত্ব অন্য দিকে প্রাণদণ্ড। তিনি প্রাণদণ্ডের পথে হেঁটেছেন তবু একটি বারের জন্যও লোভের কাছে চিত্তের পরাজয় মেনে নেননি।

বঙ্গতাজের যে দিকটি আমার হৃদয় স্পর্শ করে গেছে তা হল তার উদারতা-মহানুভবতা। ইসলামের ইতিহাসে আমরা এ ধরণের ঘটনা দেখতে পেয়েছিলাম। ঘটনাটি হল- বাংলাদেশের যুদ্ধচলাকালীন সময়ে বাংলাদেশপন্থী রাজনৈতিকদের মধ্যে উপদলীয় অন্তদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সে সময়ে তাজউদ্দীনকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটা হয়। যেই ঘাতককে পিস্তল হাতে তাজউদ্দীনকে খুন করার জন্য পাঠানো হয় সেই ঘাতকই তাজউদ্দীনের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখেন। আর তাজউদ্দীন ঘাতককে নিজের সিকিউরিটি নিয়োগ করলেন। এই ঘটনা প্রকাশের পর পাছে কোন রক্ষক্ষয়ী সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে তা রোধ করার জন্য তাজউদ্দীন ব্যাপারটি গোপন রাখেন। যার হাতে রচিত হত মৃত্যু তার হাতে তুলে দিলেন নিরাপত্তার ভার -এই উদারতা আমাকে বিস্মিত করে, মোহিত করে।

এমন মহান একজন নেতার ত্যাগ-তিতিক্ষা আমরা জানি না। তরুণ প্রজন্মের সামনে ইতিহাস আড়াল করা পর্দা তুলে দিতে হবে। জাতীয় চার নেতা ঝাঝরা হওয়া পাঁজরে বুকের সমস্ত রক্ত দিয়ে যে ইতিহাস লিখে গেছেন তা মানুষের কাছে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। আর তাহলেই ‘‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা’’-সুর করে এমন গান গাওয়ার সাথে সাথে হৃদয় দিয়েও অনুভব করবে গানের কথাগুলো কি বলে যাচ্ছে। আজকের প্রজন্ম যারা মাথার উপর স্বাধীন আকাশ পাচ্ছে, মুক্ত বাতাস পাচ্ছে, ভয়হীন জমিন পাচ্ছে তাদের জানা উচিত এই স্বাধীনতা কারা বয়ে এনেছেন। আজ একজন বঙ্গবন্ধু, একজন তাজউদ্দীনের অভাবে রোহিঙ্গারা ঘর ছাড়া, বেলুচিস্তানে হাহাকার, কাশ্মিরে কান্না। যে জাতি নিজের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পুরোপুরি জানবে না সে জাতি কখনোই নতুন আদর্শিক নেতার জন্ম দিতে পারবে না।

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি: à¦¸à¦¾à¦‡à¦«à§à¦² ইসলাম খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘তাজউদ্দীন আহমদ রচনা প্রতিযোগিতা ২০১৮’ এর চ্যাম্পিয়ন। ১৯৯৬ সালের ১১ জানুয়ারি শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত মাহমুদপুর খান পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকে তিনি ব্যবসায় শিক্ষা শাখা হতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০১৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। শিক্ষা জীবনে তিনি বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বহু পুরস্কার ও সনদ অর্জন করেছেন। তিনি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত দেশব্যাপি রচনা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে তিনি ত্বকী পদক-২০১৮ লাভ করেছেন। বেশ কিছু সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠেনর সঙ্গে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায়ও নিজের নাম লিখেয়েছেন।

আরও পড়ুন

No Related Post


আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2024 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon