শ্রী শ্রী গোপালচাঁদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কমিটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি , বাগেরহাট
সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪


বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের  লক্ষ্মীখালীতে অবস্থিত অর্ধশত বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী গোপালচাঁদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করতে কতিপয় স্বার্থন্বেষী ব্যক্তি নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ষড়যন্ত্রকারীরা  বিভিন্ন দপ্তরে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করছে। এমন কি বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।  

দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে ৫২ বছর যাবৎ একটি পরিবার দখল করে রেখেছে বিদ্যালয় টি। বিদ্যালয়ের ২ বিঘা জমি বিক্রি করা হয়েছে কোন এক ব্যাবসাহির কাছে, ৭১ শতক জমি ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে বিপুল হালদারের কাছে, বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে করা হয়েছে ১২ টি দোকান ও ১ টি অফিস।এছাড়াও নিয়োগ বানিজ্য, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে কমিটি গঠনের চেষ্টা করা তাতে বাঁধা দিলে দেয়া হয়েছে হত্যার হুমকি। কিন্তু এলাকাবাসী ও ছাত্র-ছাত্রী দের অবিভাকবৃন্দের কাছে খবর নিয়ে এ সকল অভিযোগের কোন সত্যতা মেলেনি। 

শ্রীশ্রী গোপাল চাঁদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা কাল ৫২ বছর নয় তাছাড়া অভিযুক্ত পরিবারটি ছাড়াও আরও ৫ টি পরিবারের বিশিষ্ট জনেরা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বিঘা জমি বিক্রির কোন ইতিহাস সেখানে নেই কিন্ত বিপুল হালদারের নিকট জমি বিক্রি করেছেন উক্ত বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি দীনবন্ধু সরকার ও তার পরিবার, সেটি তাদের পারিবারিক সম্পত্তি। বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে সভাপতি সাগর সাধু ঠাকুরের নির্মানকৃত কোন দোকান বা অফিসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি দোকান রয়েছে এটি উক্ত বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারি কিশোর পোদ্দারের নিজ জমিতে নির্মিত। বিভিন্ন মারফৎ খবর নিয়ে মূল অভিযোগ কারি জাহিদ হোসেন ও মামুন হাওলাদারদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। যানাযায় জাহিদ হোসেন নামে কেউ বিদ্যালয়টির অবিভাবক সদস্য ছিলেন না বা নেই আর মামুন হাওলাদার নামে কোন অবিভাবক বিদ্যালয়ে নেই।

বিদ্যালয়ের সাবেক বিদ্যোৎসাহী মোঃ সজীবুর রহমান হাওলাদারের সাথে হলে তিনি বলেন, "অভিযোগ করার মতো সে রকম কিছু এখানে নেই, এলাকার সকল লোক কখনও একমত থাকে না এই হচ্ছে ঝামেলা। অভিভাবকদের কোন অভিযোগ নেই, আমি কমিটিতে আছি আমাকেও এখনও কেউ কোন অভিযোগ করেনি। আমি শুধু কমিটিতে না আমার আলাদা একটু পরিচয় আছে, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি এই ইউনিয়নের ৫ বার চেয়ারম্যান ছিলেন। অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। যদি সাগর সাধু ঠাকুর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন আমরা তার সাথে থাকব।"
বিদ্যালয়ের সাবেক অবিভাবক সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যাবসাদার মোঃ তৈয়বুর রহমান জানায় , "সাগর সাধু ঠাকুর ও শ্রীশ্রী গোপাল চাঁদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তার কোন তুলনা হয়না, তিনি জমি দখল নিয়োগ বানিজ্য ইত্যাদি কখনও করেননি, করতে পারেন না। আমি এর আগে বিদ্যালয়ের অবিভাবক সদস্য ছিলাম। সকল বিষয় সম্পর্কে আমি জানি। যারা এগুলো করেছে তারা এলাকায় থাকে না তারা খারাপ প্রকৃতির মানুষ, এই এলাকার মঙ্গল তারা চায়না। সাগর সাধু ঠাকুর হিন্দু-মুসলমান হিসাব করে চলে না তিনি অত্যন্ত উদার এবং সৎ। এই আমার স্টেটমেন্ট আপনি ছাপিয়ে দিতে পারেন।"
ঐ এলাকায় একাধিকবার নির্বাচিত ইউপি সদস্য মোঃ মোশাররফ হোসেন হাওলাদার বলেন, "লোকমুখে শুনেছি অভিযোগ হয়েছে, পেপার ফ্লাস হয়েছে। দুই বিঘা জমি বিক্রি সম্পুর্ন মিথ্যা। সভাপতি জমি বিক্রি করলে তার কোননা কোন প্রমান থাকত। ১২ টি দোকানের বিষয়টি জ্বলজ্বলন্ত মিথ্যা, অফিস কোথায় জানানেই আমার। সাগর সাধু ঠাকুর চাচ্ছেন মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান মিলেমিশে বসবাস করতে। কারো পক্ষে কারো বিপক্ষে তিনি কখনও অবস্থান করেন না।"
স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি এনায়েত হোসেন হাওলাদারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "শ্রীশ্রী গোপাল চাঁদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে এলাকার শিক্ষানুরাগীবৃন্দ ও গোপাল সাধুর পরিবারের মাধ্যমে। এটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন তারা, যতোদিন গোপাল সাধুর পরিবারের কেউ থাকবে তারাই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব প্রদান করবে। এখানে সাধুদের এক প্লটে প্রায় ১৫০ বিঘা জমি রয়েছে। আমাদের মসজিদের একাংশ তাদের জমিতে, সাথে কিছু খাস সম্পত্তি আছে সেখানে আমরা ভবন করেছি। এটা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সাগর সাধুর মতো একজন মানুষ কাউকে হুমকি দিতে পারে না। এটা হয়তো একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি, এটা ব্যাক্তি শত্রুতা পুরোন করছে। সাগর সাধু একজন হিন্দু মানুষ নিজ কর্মের মাধ্যমে একটি ভালো অবস্থানে পোঁছেছেন এটা ওরা মেনে নিতে পারছে না।" 
স্থানীয়   বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মোঃ মিজানুর রহমান হাওলাদার জানায় , "আমার প্রতিবেশী স্কুল, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটি বা অবিভাবক সদস্য কোন কিছুর সাথে আমি জড়িত না আমরা যেটা শুনি তা লোকমুখে। স্কুলের জায়গা কেউ দলিল দিতে পারে না। যে জমিটি স্কুলের সেটা কারো বিক্রি করতে পারার কথা না। ওখানে কমিটি কিভাবে হয়েছে সেটা আমার জানার কথা না। যেহেতু গেপাল চাঁদ স্কুল নামকরণ সাগর সাধু ঠাকুর সভাপতি আছেন, তার আগে তার বাবা ছিলেন সেখানে অন্য কেউ সভাপতি হওয়ার আগ্রহ করে না। কমিটি নিয়ে টুকটাক ঝামেলা কেউ করছে, গুনজন শোনা যায়। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে কোন অবিভাবক কি অভিযোগ করেছে সেটা জানি না। স্কুল পরিচালনার ক্ষেত্রে সাগর সাধু ঠাকুর কতটা সফল কতটা ব্যার্থ স্কুলে সে-রকম খোঁজ খবর নিতে পারিনা কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে সাগর সাধু ঠাকুর ভালো মানুষ, আমার কাছে মনেহয়।"

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাগর সাধু ঠাকুর বলেন, "এই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী পরিবার ও আমার পরিবারের দেওয়া জমিতে প্রতিষ্টিত বিদ্যালটি আরও সুনামের সাথে পরিচালিত হোক, আমি এটাই চাই। এই বিদ্যারয়ের জন্য আমরা সকলে মিলে আরো উন্নয়ন করতে চাই। মিথ্য অভিযোগ যারা করছে, তারা পরিকল্পিতভাবে  বিদ্যালয়টির ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, যা যথাযথ তদন্তে প্রকাশিত হবে।"
অসত্য অভিযোগ ও পরিকল্পিত অপপ্রচার সম্পর্কে সে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চক্রান্তকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে তারা তৎপর। প্রত্যন্ত গ্রামে একেবারে সুন্দরবন সংলগ্ন যেখানে এখনও রাস্তা-ঘাট নেই বিদ্যুৎ সংযোগ পৌছেছে মাত্র বছর খানেক হলো। সেখানে যদি এমন ষড়যন্ত্র চলতে থাকে তাহলে কোথায় গিয়ে দাড়াবে সে এলাকার শিক্ষা ব্যাবস্থা? কি হবে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের? এটাই সে এলাকার সুধি মহলের প্রশ্ন।