নারীশিক্ষা
'বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী যে অস্ত্রটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন তা হচ্ছে শিক্ষা।' দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা নোবেলজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা কথাটি বলেছেন। শিক্ষাকে ধরা হয় সর্বোত্তম বিনিয়োগ হিসেবে। অথচ দেশ এখনো শিক্ষার আলোয় পুরোপুরি আলোকিত হতে পারেনি। শিক্ষার হার এখনো শতভাগ হতে পারেনি (৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ)। ফার্সি গদ্যের জনক মহাকবি শেখ সাদি বলেছেন, ‘একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না।’
সুতরাং আমরা যদি মানুষকে জাগ্রত করতে চাই তবে সবার আগে আমাদের নিজেদের ঘুম ভাঙাতে হবে। সেই ঘুম ভাঙাতে পারে শিক্ষা। বলা হয়ে থাকে জ্ঞানই সম্পদ। তাই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। বর্তমান পৃথিবী তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে যারা শিক্ষায় উন্নত। একবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয় দশক পার হতে চলেছে আজও আমরা শতভাগ শিক্ষা থেকে বহু দূরে পড়ে আছি। ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ও নামকরা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণে আমাদের অংশগ্রহণ খুবই কম। দেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো নারীর উচ্চ শিক্ষাকে উৎসাহিত করা হয় না। অথচ আজ থেকে বহু বছর আগে সেই ১৯ শতকে দ্বিগজয়ী ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলে গেছেন, ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো’।
নেপোলিয়নের এই উক্তি যারা যত দ্রুত বুঝতে পেরেছে, তারা তত দ্রুত সাফল্য পেয়েছে। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের গ্রামে, গঞ্জে বাবা-মাকে পরামর্শ দেওয়া হয়- ‘“মেয়েকে ঢাকায় পড়তে দেবেন না, নষ্ট হয়ে যাবে”। বহু বাবা তার মেয়েকে এই তথাকথিত ‘নষ্ট হবার ভয়ে’ ভালো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন। মফস্বলের যে সমস্ত মেয়েরা স্কুল কলেজে ভালো ফলাফল করেন তাদের বড় অংশ এখনো এ ধরণের সামাজিক অজ্ঞতার শিকার হন।
কূপমণ্ডুকতার কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক মেধেবী শিক্ষার্থী যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রত্যাশিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এর কারণ যতটা না আর্থিক তার থেকে বড় কারণ হল তারা ‘নারী’! এই দূরাবস্থা দূর করতে হলে আমাদের রাষ্ট্রীয় কিছু উদ্যোগ দরকার। মহিলা স্কুল বা কলেজে পুরুষ শিক্ষকমুক্ত করা হোক। এতে নারীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নারীর শিক্ষা গ্রহণের সংকোচ দূর হবে। আর ধর্মীয় কারণে যে খোড়া অযুহাত দেখানো হয় তাও কমে আসবে। সমানভাবে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা যখন বিভিন্ন এলাকা সফর করবেন তখন নারী শিক্ষাকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করুন।
যারা নারী শিক্ষার বিষয়ে বলেন, ঢাকায় গেলে নষ্ট হয়ে যাবে। তারা কি এই গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে ছেলেরা গেলে নষ্ট হবে না। তাহলে কি আমরা ছেদের নষ্ট হওয়াকে সমর্থন করি, আর মেয়েদেরটা সহ্য করতে পারি না? এখন দেখা যাক, যারা (ছেলে বা মেয়ে) নিজ বাড়িতে থাকে তারা কি নষ্ট হতে পারে না? সোজা কথায় বললে, সমাজ ছেলের প্রেমকে মানতে পারে নারীর প্রেমকে পারে না। কিন্তু এই প্রেম করার জন্য এই যুগে ঢাকায় যেতে হয় না। বদ্ধ ঘরে কাথা মুড়ি দিয়েও করা যায়। যদি আপনি আপনার সন্তানকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে চান তবে তাকে নৈতিকতা শিক্ষা দিন। সে যেখানেই থাকুক নষ্ট হবে না।
যদি আপনি অনেক ধর্ম ভীরু হন তবে আপনাকে বলছি, এমন অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন যারা পরিপূর্ণভাবে হিজাব ও পর্দা করে ক্লাস করেন, জাতি গঠনে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন। সুতরাং ঢাকায় পড়তে গেলে নষ্ট হয়ে যাবে এ কথা যারা বলেন তারা শুধু নিজেরাই অন্ধকারে রয়েছেন তা নয়, তারা সমাজকেও অন্ধকারের দিকে টেনে রাখেন। তারা জানেন না, মূর্খের উপাসনা অপেক্ষা জ্ঞানীর নিদ্রা শ্রেয়।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন