Bangla Runner

ঢাকা , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | বাংলা

শিরোনাম

গ্রীষ্ম, বর্ষা না বসন্ত কোন ঋতু সেরা?  এফ রহমান ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি শাখাওয়াত, সম্পাদক আশিক বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ই-মেইল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫ মসলা Important Quotations from Different Disciplines স্যার এ এফ রহমান: এক মহান শিক্ষকের গল্প ছয় সন্তানকে উচ্চ শিক্ষত করে সফল জননী নাজমা খানম ‘সুলতানার স্বপ্ন’ সাহিত্যকর্মটি কি নারীবাদী রচনা? কম্পিউটারের কিছু শর্টকাট ভালো চাইলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করুন
Home / মুক্তমত

করোনা ভাইরাস:

অভয়দাতারা আজ কই?

এম.এস.আই খান
শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ Print


28K

হালাকা জ্বর অনুভব করছি। জানি না কখন কী ঘটে যায়। সাধারণ জ্বরের ওষুধ পর্যন্ত বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে ফার্মেসীগুলো। গতকাল বিকেলে তিনটা ফার্মেসী ঘুরে একটাতে পেয়েছি। যেটাতেই যাই প্যারাসিটামল শুনেই না বলে দেয়। লিখতে বসে আমার মনে পড়ছে আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির কথা। আনা ফ্রাঙ্ক তার ডায়েরিতে লিখেছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়কার নিষ্ঠুরতার কথা। এখন কোন বিশ্বযুদ্ধ হচ্ছে না, তবুও বাইরে বেরুলে মৃত্যুর হাতছানি ও চারপাশের কথা লিখতে বসেছি।

এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা। প্রচলিত আছে, কাক অন্যের থেকে খাবার লুকিয়ে রাখার জন্য নিজেই চোখ বন্ধ করে কোথাও গুঁজে রাখে। আর ভাবে, কেউ দেখেনি। কিন্তু পরে সে নিজেই তা আর খুঁজে পায় না। আমাদের অবস্থাও আজ অনেকটা তেমন-ই। আজ কার সর্দি জ্বর, কার টাইফয়েড, কার ডেঙ্গু আর কার করোনা তা বোঝার কোন উপায় নাই। টেস্ট করা ছাড়া অনুমানের উপরই আমাদের এখন ভরসা করতে হচ্ছে- ‘করোনা হয়নি’! কাকের মত এই চোখ বুঝে মনে করে নেওয়ার ফলে যিনি সত্যি সত্যিই করোনা আক্রান্ত তিনি নিজের অজান্তেই আক্রান্ত করে ফেলছেন শত-সহস্র জনকে।

বিশ্বের কোন দেশেই এখনো করোনা রোগের কোন ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। কিন্তু অন্তত অনান্য দেশগুলো জ্বর অনুভব হলে পরীক্ষা করে জানতে পারছে তাদের করোনা হয়েছি কী হয় নাই। কিন্তু আমরা মারা যাব না জেনেই। আমাদের উন্নয়ন নিয়ে এতদিন যে জোয়ার ছিল। এখন তা চোখের নোনা জলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অসুস্থতায় যদি নূন্যতম চিকিৎসা না পাই তবে সেই উন্নয়ন কী কাজে লাগবে? উন্নয়ন তো জীবনের জন্য। জীবনই যদি না থাকে তবে এই বড় বড় ব্রিজ, ফ্লাইওভার দিয়ে কী হবে আমাদের?

২.
আমাদের গ্রামে-গঞ্জে বহুল প্রচলিত একটা কথা আছে। সেটি হল, ‘গরবী বাবা-মায়ের সন্তানদের হিসেব করে চলতে হয়’। আমাদের দেশ কানাডা নয়, তবুও আমরা জাস্টিন ট্রুডো’র মত প্রধানমন্ত্রী চাই। কিন্তু কানাডার মত জনগণ চাই না। আমরা সবাই যখন জানি, আমার দেশ গরিব। তখন আমরা কেন নিজেরা সচেতন হই না? এই আমরাই মানুষের ভয়কে পুঁজি করে দ্রব্যের মূল্য বাড়াই। এই আমাদের মধ্যে যারা দিন আনে দিন খায় না অর্থাৎ ঘরে থাকার সুযোগ রয়েছে তারাও ঘরে থাকে নাই। ‘বাংলাদেশে করনা আসবে না’- এমন অন্ধ বিশ্বাসে সকাল সন্ধ্যা ঘরের বাইরে থেকে হাঁচি-কাশি, থুথু যেখানে সেখানে ফেলে বেড়িয়েছি। আর মহামারি যখন পেয়ে বসেছে তখন হা-হুতাশ করা ছাড়া অন্য দরজা খোলা নাই।

করোনার কাছে কে সরকারি দল, কে বিরোধী দল তার কোন বিভেদ নাই। যতই বিরোধীতা থাকুক পরস্পরে যদি নিজ দেশটা উন্নত হত প্রতিটি মানুষ আজ অন্তত এই অবস্থার চেয়ে ভাল থাকত। কিছুদিন আগেও যারা জোকের মত মানুষের রক্ত চুষে বৈধ-অবৈধ বাচ-বিচার না করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তারা অন্তত এই সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। আলীবাবা সাহায্যের ঘোষণা দিচ্ছে কিন্তু এই দেশে কতশত বাবা আছে যারা এই দেশের দিন-দুঃখী মানুষকে শুষে খায় তারা একটু ফিরে তাকান। মানুষই যদি না বাঁচে আগামীতে কার কাছে পণ্য বিক্রি করবেন, কিংবা কার সম্পদ দখল করবেন?

৩.
ভারত, পাকিস্তানে হুহু করে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। মুহূর্তে তথ্য আপডেট হচ্ছে। আর আমাদের আপডেট আসে প্রতিদিন বিকেলে! ছোট্ট দেশ নেপাল কোয়ারাইন্টানের জন্য যে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে আমরা তা পারি নাই। দেরিতে হলেও সব বন্ধ করে দিয়ে আমাদের ঘরে থাকার হুকুম এসেছে কিন্তু ঘরে থাকার খাবার আসে নাই। স্কুলের, রাস্তার পাশে যে মানুষটা ফুচকা বিক্রি করত, শহরের রাস্তা ঘাটে জনে জনে চাঁদা তুলে খেত যে হিজড়া,  ছন্দে ভড়া বড় গলায় বাস থামালেই চড়ে বসত যে হকার, শরীর থেকে ঘাম ঝড়িয়ে প্যাডেল মারিয়ে জীবন চালায় যে রিকশাচালক তারা আজ মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের ঘরে ভাতের অভাব বাইরে করোনার ছোবল।

মেহেরপুরে কিংবা ঢাকা থেকে বহু দূরের কোন রোগীর জ্বর থাকলে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকা ছাড়া অন্য কোথাও কোন উত্তর নেই। ঢাকামুখী আমাদের এই রোগ শুধু আজকের নয় দীর্ঘদিনের। যে মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে মানুষ এই দুর্যোগের সময় ঢাকা আসবে কী করে? অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা সে কই পাবে? কিংবা যার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া আছে সে এই মহামারীর মধ্যে কোথায় গিয়ে ভর্তি হবে? হাসপাতালগুলো কতজন করোনা রোগীকে জায়গা দিতে পেরেছে?

চিকিৎসকরা আজ ভয়ে রোগীর দিকে তাকাচ্ছে না। চিকিৎসকের জন্য সুরক্ষা পোশাক নাই। আজ এক মহা সংকটে আমরা। চারদিকে শুধু নাই আর নাই। অথচ কিছু দিন আগেও আমরা ‘ভয়ের কোন কারণ নেই’ এমন অভয় বাণী শুনেছি। কিন্তু আজ যখন করোনা দরজায় কড়া নাড়ছে তখন সকল অভয় দাতা মানুষগুলোর কোন জবাব নাই।

লেখক: সাংবাদিক

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2024 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon