Bangla Runner

ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ | বাংলা

শিরোনাম

বিশ্বের বৃহত্তম সাত স্টেডিয়াম যুদ্ধ লাগলেই কেন বাড়ে স্বর্ণের দাম? তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম বিতর্কের বিষয় ব্যাংক বিতর্কে শব্দ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে একজন ভাল লেখক হতে চাইলে এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নজরে সুন্দরবন পরাগায়ন কাকে বলে? শৈবাল কী?
Home / ক্যাম্পাস

ডাকসু নেতা রাব্বানীর ভর্তি প্রক্রিয়ায় গলদ!

মীর মোহাম্মদ জসীম ও ইয়ামিন সাজিদ
সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ Print


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সদ্য-সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে প্রার্থীতার সুযোগ করে দিতে কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২৯ বছরের অচলায়তন ভেঙে এ বছরের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করে জয়ী হন গোলাম রাব্বানী। তবে এরমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাব্বানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে ভর্তি হওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচনে কেউ প্রার্থী বা ভোটার হতে চাইলে তার অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ছাত্রত্ব থাকতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, ডাকসু নির্বাচনের আগে রাব্বানীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে এমফিল কোর্সে ভর্তির মাধ্যমে ‘ছাত্রত্ব পাইয়ে দিতে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন খোদ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন প্রকার ফ্যাকাল্টি মিটিং এবং বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের বৈঠক ছাড়াই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাব্বানীর থিসিস পেপার গ্রহণ করা হয় এবং তাকে এমফিলে ভর্তির করানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিলে ভর্তির নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেকটি থিসিস পেপার পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করার পরই প্রার্থী ভর্তির সুযোগ পান। 

এই প্রক্রিয়ার শুরু নির্দিষ্ট বিভাগের সকল শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে। এরপর তা সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের সভাপতিত্বে সকল বিভাগের চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপকদের সমন্বয়ে ফ্যাকাল্টি মিটিং এ উত্থাপিত হয়। সেখানে পাশ হলে তা বোর্ড অফ অ্যাডভান্স স্টাডিজে পাঠানো হয় যেখানে উপাচার্যের সাথে সব বিভাগের অধ্যাপকরা থাকেন। এরপর তা পাঠানো হয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে যেখানে উপাচার্যের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, সকল বিভাগের চেয়ারম্যান, ডিন, পরিচালক এবং সকল অধ্যাপকরা থাকেন। ওই কমিটিতে বিষয়টি পাশ হলে সর্বশেষ তা পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে। 

এই পাঁচটি ধাপের মধ্যে থিসিস পেপারের খুঁটিনাটি যাচাইয়ে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখে ফ্যাকাল্টি মিটিং।  à¦¤à¦¬à§‡ রাব্বানীকে ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টি মিটিং এবং বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজের বৈঠকের ধাপ দুটি এড়িয়ে যান অপরাধ বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া। 

অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, “ভর্তি প্রক্রিয়ার নিয়ম কানুনে ব্যতয় ঘটার কোন সুযোগ নেই। সবকিছুই নিয়মের মধ্যে করা হয়েছে।”

তবে অধ্যাপক জিয়া বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির বৈঠকে রাব্বানীর থিসিস পেপার অনুমোদন দেওয়া হলেও তা ফ্যাকাল্টি মিটিং এ পাঠানো হয়নি। তিনি বলেন, “সময় স্বল্পতার কারণে আমরা থিসিস পেপার ফ্যাকাল্টি মিটিং এ জমা দেইনি। হ্যাঁ, এটা নিয়মের লঙ্ঘন তবে এটা অবৈধ না।”

তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এরকম বহু ঘটনা আছে যেখানে ফ্যাকাল্টি মিটিং এর অনুমতি ছাড়াই থিসিস অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সূত্রগুলো বলছে, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের বৈঠকের সময় এবং আলোচ্য বিষয়সূচি বৈঠকের আগের দিন চূড়ান্ত হয়। 

তবে জানুয়ারি মাসে যে বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের বৈঠক হয়েছে সেখানে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো এমফিল প্রস্তাবনা ছিল না। ওই বৈঠকের দুইদিন পর যখন একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক বিকেল ৩টায় শুরু হয় তখন উপাচার্য একজন ডেপুটি-রেজিস্ট্রারকে ডেকে বলেন, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাঠানো তথ্যকে বৈঠকের  à¦†à¦²à§‹à¦šà§à¦¯à¦¸à§‚চিতে যোগ করে নেওয়ার জন্য। 
 
সংশ্লিষ্ট ওই সূত্রটি  à¦¬à¦²à¦›à§‡, এরপর ওই কর্মকর্তা অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাঠানো পাতাটি প্রিন্ট করে নেন। সেখানে এমফিল ভর্তিচ্ছু হিসেবে গোলাম রাব্বানী এবং আরো তিন জনের নাম লেখা ছিল। এরপর উপাচার্য বৈঠকে এই প্রস্তাবনাটি পাশ করে দেন। 

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার জামাল আহমেদ বলেন, “অ্যাকাডমিক কাউন্সিলের মিটিং শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ক্রিমিনোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে এই ডকুমেন্টটা আসে। আমাদেরকে বলা হয়, এটার এক কপি প্রিন্ট দিয়ে তা মিটিংয়ের এজেন্ডার সাথে যুক্ত করে দেওয়ার জন্য। আমাদেরকে যেভাবে বলা হয়েছে, আমরা সেভাবেই করেছি।”

শুধুই কি তাড়াহুড়া, নাকি অন্যকিছু: ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে এমফিলে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই বছরের ১০ অক্টোবর ছিলো আবেদনের শেষদিন। প্রার্থীদের জমা দেওয়া আবেদনগুলো চূড়ান্ত করতে জানুয়ারি মাসেই বিভিন্ন অনুষদে ফ্যাকাল্টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। 

অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভূক্ত। এই অনুষদটির ফ্যাকাল্টি মিটিং অনুষ্ঠিত হয় এই বছরের ১৬ জানুয়ারি। তবে সেই বৈঠকে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কোনো এমফিল প্রস্তাবনা ছিল না। 

নিয়ম অনুযায়ী, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২২ জানুয়ারি এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২৪ জানুয়ারি।  à¦à¦°à¦®à¦§à§à¦¯à§‡ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচনের তফসিলের তারিখ à§§à§§ ফেব্রুয়ারি এবং নির্বাচনের তারিখ à§§à§§  à¦®à¦¾à¦°à§à¦š ঘোষণা করে। 

ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রধানতম শর্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ছাত্রত্ব। কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছিলো আরো সাত বছর আগেই। ২০০৭-২০০৮ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়া গোলাম রাব্বানী ২০১১ সালেই তার স্নাতক সম্পন্ন করেন। 

যেহেতু বোর্ড অন অ্যাডাভান্সড স্টাডিজ এবং অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক পরবর্তী তিন মাসের আগে হওয়ার সুযোগ ছিল না, তাই তড়িঘড়ি করে ২৪ জানুয়ারির ওই বৈঠকেই তা অনুমোদন করে দেন উপাচার্য। ফলে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগে এমফিলে ভর্তির সুযোগ পান বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। 

এরপর রাব্বানী ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডাকসুর জিএস হিসেবে নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, ডাকসু নির্বাচনের আগে যে ফ্যাকাল্টি মিটিং হয়েছিল সেখানে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমফিলের কোন আবেদন ছিল না। 

তিনি বলেন, “ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ের উপস্থাপন ছাড়া থিসিস প্রপোজাল অনুমোদনের কোন সুযোগই নেই। কিন্তু আমি জানি না সে (রাব্বানী) কিভাবে ভর্তি হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, কোন থিসিস পেপার যদি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হয় তবে তাকে অবশ্যই ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে অনুমোদন পেতে হবে। এরকম হতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। যেই থিসিস পেপার ফ্যাকাল্টি মিটিংয়ে এপ্রুভ হয় নাই, সেটা কিভাবে সিন্ডিকেটের মিটিংয়ে অনুমোদন পায়। এই ধরণের কোন অভিযোগ থাকলে, তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2021 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon