Bangla Runner

ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ | বাংলা

শিরোনাম

শীতকালীন ত্বকের যত্নে পাঁচ পরামর্শ কম্পিউটারের কিছু শর্টকাট ভালো চাইলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়াতে শুরু করুন বিশ্বের বৃহত্তম সাত স্টেডিয়াম যুদ্ধ লাগলেই কেন বাড়ে স্বর্ণের দাম? তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম বিতর্কের বিষয় ব্যাংক বিতর্কে শব্দ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে একজন ভাল লেখক হতে চাইলে এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Home / ক্যাম্পাস

প্রয়াত গ্রাজুয়েটের সমাবর্তন

কানেতা ইয়া লাম-লাম
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ Print


বছর ঘুরে আবারো সমাবর্তন কড়া নেড়েছে। আবারো কালো গাউন আর ক্যাপের সাজে শিক্ষাজীবনের বিশেষ দিনটি স্মৃতির মণিকোঠায় যথাসম্ভব স্মরণীয় করে রাখতে যাচ্ছে নব্য গ্রাজুয়েটরা। সমাবর্তন একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের বহু প্রতিক্ষীত দিন। গত বছর ৫১তম সমাবর্তনে একঝাঁক গ্রাজুয়েট অংশ নেয়। তবে এতশত গ্রাজুয়েটের ভীড়ে একজন প্রয়াত গ্রাজুয়েট ও সমাবর্তন নিয়েছিল। অর্থাৎ কাগজে কলমে। সহপাঠীরা বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রায়ত বন্ধুর জন্য সমাবর্তনের ব্যবস্থা করে এবং তার পরিবারের কাছে উপাচার্যের হাত থেকে সমাবর্তনের সামগ্রীসহ সার্টিফিকেট তুলে দেয়। প্রায়ত শিক্ষার্থীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শামীম সব প্রক্রিয়া একাই দৌড়াদৌড়ি করে সম্পন্ন করে৷ এই সমাবর্তনই ছিল বন্ধুর প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে ট্রিবিউট। 

বলছিলাম আতিকুল ইসলাম হৃদয়ের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ছিল হৃদয়। ক্লাসের সবথেকে শান্তশিষ্ট আর কিছুটা নির্লিপ্ত ছেলেটা ছিল হৃদয়। বন্ধুবৃত্ত ও ছিল অত্যন্ত সীমিত। তাই ক্লাসের অনেকের ধারণা ছিল হৃদয় হয়ত একটু বাউন্ডুলে৷ একটু ভোলা মনের৷ তবে কষ্টের ব্যাপার হল ৪ বছর একসাথে পড়াশুনা করেও এই নির্লিপ্ততার সত্য জানতে পেরেছি হৃদয়ের মৃত্যুর পর। হৃদয় যে জীবন সংগ্রামে অকুতোভয় যোদ্ধা তা জেনে কেন যেন হৃদয়ের সহপাঠী হিসেবে খুব গর্ববোধ হয়েছে। 

হৃদয়ের জন্মের আগে হৃদয়ের ৮ মাস বয়সী বড়বোন মারা যায়। পরিবারটি নানাসময় সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলো। হৃদয় ছিল এলাকার সেরা মেধাবীদের একজন। তাই তো পরিবারকে সাহায্যের জন্য শুরু থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করত৷ কখনো ৭টা কখনো ৮টা টিউশন করে হাড়ভাংগা পরিশ্রম করতে হয়েছে ওর। রাতে বাড়ি ফিরেও নিস্তা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় ১ম বর্ষ থেকেই চলত স্বপ্ন ছোয়ার প্রস্তুতি। সারা রাত পড়াশুনা চলত বিসিএসের৷ হৃদয়ের চল্লিশায় ওর বাড়িতে শয়নকক্ষে গিয়ে দেখি ইংরেজি শব্দের ফ্লাশকার্ড, বিসি এসের বই সহ নানারকম প্রস্তুতিমূলক সরঞ্জাম। সবই ছিল আগের জায়গায়। শুধু মানুষটা ই ছিল না। হৃদয়ের কখনোই কোন চাকরীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি। তার আগেই পাড়ি জমাতে হয়েছে না ফেরার দেশে।

সুদূর উত্তরা থেকে নিয়মিত ক্লাসের জন্য আসত ও। যদিও ক্লাসের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। তবুও ড্রপের আশংকা যাতে না থাকে সে ব্যাপারেও ছিল সচেতনতা। শ্রদ্ধেয় শ্যামলি ম্যাম খুব স্নেহভরা গলায় হৃদয়কে ডাকতেন। একবার ক্লাসের সামনে এসে ও কে নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে বলেছিলেন। হৃদয় তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে জানায় এত বছরের শিক্ষাজীবনে এই প্রথম পুরো ক্লাসের সামনে কিছু বলা। 

হৃদয়কে কখনো বন্ধুদের আড্ডা মজতে দেখিনি৷ বিভাগের কোন আয়োজন অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেখিনি। কারন হৃদয়ের মগজে ছিল দায়িত্বের চাপ। এমনকি হৃদয় আমার ভালো বন্ধু ও ছিলনা।তারপরও হৃদয়ের এলাকায় একদিন বন্ধুরা মিলে ঘুরতে গিয়ে যে আতিথেয়তা পেয়েছিলাম আমরা সবাই খুব মুগ্ধ হয়েছি। পরের বার ওর বাড়িতে যাওয়া হয়েছিলো ওর মৃত্যুর পর। গত বছর মোটরবাইক দূর্ঘটনায় হৃদয়ের মৃত্যু যখন হয় তখন কক্সবাজার সফর শেষ করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় বাড়িতে ফিরছিলো। এতপথ পাড়ি দিয়ে ঠিক বাড়ির পাশেই ওর সদ্য কেনা মোটরসাইকেলে দূর্ঘটনা ঘটে। অথচ অই মূহুর্তে হেলমেট পড়া থাকলে আজ হয়ত এ লেখা লিখতে হত না। 

হৃদয়ের মৃত্যুর সাথে সাথে ওর এত বছরের ত্যাগ তিতিক্ষা পরিশ্রম আর স্বপ্ন গুলো ও যেন পরপারে চলে যায়। এখনো পরিবার টির হাহাকার থামেনি। ভাই এর নিস্তব্ধতা বোনের হাহাকার মায়ের গগনবিদারী আহাজারি যখন শুনেছিলাম মনে হচ্ছিলো প্রকৃতিকে কেন এত নিষ্ঠুর হতে হবে? তবুও পরমাত্মার কাছে প্রার্থনা থাকবে হৃদয়ের রেখে যাওয়া স্বপ্ন যেন ওর ভাইবোনের মাধ্যমে পূরণ হয়৷ 

আমাদের মাঝে হয়ত এখনো অনেক হৃদয় নামের যোদ্ধা লুকিয়ে আছে। যাদের জীবনযুদ্ধের কষাঘাতে অন্যমনষ্ক থাকতে হয়।অনেক সময় নিয়মিত ক্লাসে আসা হয় না বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হয়না।তাই তো আমাদের উচিত বন্ধুদের প্রতি সদয় হওয়া।সিজিপিএ এটেন্ডেন্স এর যুদ্ধে না গিয়ে বন্ধুদের মেন্টাল হেলথ বোঝা। ড্রপ আউট সিজির গোড়াকলে পড়ে আমরা যেন আমাদের মনুষ্যত্ব না হারাই এতটুকু কামনা। কারন যে বন্ধুটাকে আমরা ড্রপ আউটের জন্য মজা করছি হয়ত তার জীবনের প্রতিটি দিন যুদ্ধক্ষেত্র! 

আমরা আর কোন হৃদয়কে হারাতে চাইনা। সকল হৃদয়কে সমাবর্তনের কালো গাউন ও হ্যাটে দেখতে চাই।একারনে যারা মোটরবাইক চালাই সকলে হেলমেট ব্যবহারে সচেতন হই। ৫২তম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া সকল গ্রাজুয়েটের স্বপ্ন যেন পূরণ হয় এই প্রার্থনা থাকলো।

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2021 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon