Bangla Runner

ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ | বাংলা

শিরোনাম

বিশ্বের বৃহত্তম সাত স্টেডিয়াম যুদ্ধ লাগলেই কেন বাড়ে স্বর্ণের দাম? তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম বিতর্কের বিষয় ব্যাংক বিতর্কে শব্দ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে একজন ভাল লেখক হতে চাইলে এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নজরে সুন্দরবন পরাগায়ন কাকে বলে? শৈবাল কী?
Home / ক্যাম্পাস

ডাকসু নির্বাচনের এক বছর

ডাকসু: কি পেল কি প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেল?

এম.এস.আই খান
শুক্রবার, ১৩ মার্চ, ২০২০ Print


ডাকসু নির্বাচনের এক বছর পার হয়েছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা ব্যক্তিগতভাবে ও দলগতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন নানা সমস্যা সমাধানের। ২৮ বছরে জড়ো হওয়া সমস্যার পাহাড় ভাঙতে এক বছরের ডাকসু কতটা সফল হবে সেই চ্যালেঞ্জ ছিল শুরু থেকেই। তবে বছর শেষে দেখা গেছে, মোটাদাগে চিহ্নিত করা অনেক সমস্যাই এখনো বহাল রয়েছে। আবার এমন অনেক সমাধান ডাকসু শিক্ষার্থীদের উপহার দিয়েছে যা- ছিল না নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে। পাওয়া না পাওয়ায় তেমনি কয়েকটি বিষয় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল-

ক. ডাকসুর সাফল্য:
জোবাইক: ২৮ বছর পর হওয়া ডাকসু নির্বাচনের বড় অর্জনের মধ্যে অন্যতম হল ক্যাম্পাসে অ্যাপস ভিত্তিক বাই-সাইকেল চালু করা। গত ১৬ অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ডিইউ চক্কর-জোবাইক সেবা। ডাকসুর পরিবহন সম্পাদক শামস ঈ নোমান মনে করেন, জোবাইক ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যয়ও কমছে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন ডেন্ডিং মেশিন: বিশ্ববিদ্যালয় কয়েকটি স্থানে ও ছাত্রীদের পাঁচটি হলে ডাকসুর উদ্যোগে বসানো হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপটিন ভেন্ডিং মেশিন। এসিআই কনজ্যুমার ব্রান্ডের সহায়তায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর এই মেশিন চালু করা হয়। এটিকে ডাকসুর অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই মেশিন থেকে মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ডাকসু সদস্য তিলোত্তমা শিকদার এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সান্ধ্যকোর্সে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ: ডাকসু নির্বাচনের সময় সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের বিষয়ে জোরালো দাবি উঠেছিল। তবে সান্ধ্যকোর্সে ভর্তি বন্ধের ঘোষণা না এলেও নতুন করে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত এবং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরীন আহমাদকে প্রধান করে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলে রাতে প্রবেশের সময়সীমা ছিল সর্বোচ্চ রাত ৯টা পর্যন্ত। হল সংসদ ও কেন্দ্রীয় ডাকসুর উদ্যোগে ওই সময়সীমা বৃদ্ধি করে ১০টা করা হয়।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড: ডাকসু চালু হওয়ার পর কেন্দ্রীয়ভাবে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত আয়োজন ছিল ‘ট্যালেন্ট হান্ট’। বিশ্ববিদ্যালয়েল প্রতিটি হলে হলে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সেরাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।   সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদারের নেতৃত্বে এ ছাড়াও বেশ কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে ছিল- কোরিয়ান বাংলা কালচারাল এক্সচেঞ্জ, ধর্ষণ বিরোধী মাইমো ড্রামা, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে যৌথ বিজয় কনসার্টসহ আরো কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তিনি।

সাহিত্য: সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির (শয়ন) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখা নিয়ে ডাকসু সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার উদ্যোগে প্রকাশিত প্রথম সাময়িকি ছিল ‌‘বছর ত্রিশেক পরে’। ডাকসুর উদ্যোগে প্রথমবারের মতো গত ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বইমেলা।

ক্রীড়া প্রতিযোগিতা: ডাকসুর উদ্যোগে বেশ কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আমমেদের নেতৃত্বে ক্রিকেট, ফুটবল, ফুটসাল, ভলিবল, সাঁতার, ওয়াটার পোলোসহ বেশ কিছু প্রতিযোগিতা।

ফাস্ট এইড কর্মসূচি: ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন ছাত্রী হলগুলোতে সাইবার সচেতনা কর্মসূচি পালন করার উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তার অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাদের বাঁধার করণে তা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি মাসে তিনি ফাস্ট এইড (প্রাথমিক চিকিৎসা) কর্মসূচি পালন করেছেন।

অন্যান্য কাজ: কয়েকটি বিভাগের উন্নয়ন ফি কমানো, গ্রন্থাগারের সময়সীমা বাড়ানো, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ট্রিপ ও রুটের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুইমিং পুলের সময়সূচি পরিবর্তন, মেয়েদের বাইসাইকেল চালানো শেখানো, বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দেশী ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সেমিনার আয়োজন, ফটোকপির মূল্য নির্ধারণ, ১০০ শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেল প্রদানের উদ্যোগসহ বেশ কিছু ইতিবাচক কাজ করেছে ডাকসু।


খ. প্রতিশ্রুতিই রয়ে গেল যা:
গণরুম সংকট:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট থেকে সৃষ্ট গণরুম সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া ছিল ডাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ‘প্রতিশ্রুতি’। ডাকসু নির্বাচনের এক বছর হয়ে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবয়নে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি। ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত গণরুম বন্ধে আন্দোলন করলেও আশ্বাসে বিশ্বাস করে শান্ত হয়েছেন তিনিও। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হবার আগেই গণরুমগুলোতে বাঙ্ক বেড স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তয়ন করা হয়নি। ফলে ডাকসু নির্বাচনের আগে ও এক বছর পরে কার্যত একই রয়ে গেছে গণরুমের দৃশ্য।

রিকশা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ: ক্যাম্পাসের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরুত্বে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ ও চালু করার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তয়ন হয়নি। ডাকসু নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম সভায় রিকশা ভাড়া নির্ধারণ ও কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। চলতি মার্চ মাসে রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে একটি নোটিশ ঝুলানো হলেও তা বাস্তবায়ন ঘটেনি। ক্যাম্পাসে নিজস্ব উদ্যোগে অটো রিকশা চালু করার কথা শোনা গেলেও এখনো তা রাস্তায় নামেনি।

সাত কলেজ বাতিল: রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি এসেছিল নির্বাচনী প্রচারণায়। ডাকসুর ভিপি ও এজিএস বাতিলের পক্ষে মত দিলেও তা ফলপ্রসু হয়নি। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন সাত কলেজ সম্পর্কে বলেছিলেন, এটি একটি ‘আনহ্যাপি ম্যারেজ’, এর ‘পিসফুল ডিভোর্স’ চান তিনি। তবে পরবর্তীতে তাকে আর এই বিষয়ে সরব হতে দেখা যায়নি।

ক্যান্টিনে খাবারের মান বৃদ্ধি: ডাকসু নির্বাচনের পর হলগুলোর ক্যান্টিনের খাবার মান বৃদ্ধিতে  à¦›à¦¾à¦¤à§à¦° সংসদের ইতিবাচক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে ক্যান্টিন থেকে চাঁদাবাজী শুরু করেন খোদ হল সংসদ নেতারাই। বিজয় একাত্তর হল ও কবি জসিম উদ্দিন হলে এ ধরণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। শুরুর দিকে খাবারের মান বৃদ্ধিতে যতটা তোরজোড় ছিল এখন আর ততটা নেই। ফলে অনেকটা আগের আনেই ফিরেছে হল ক্যান্টিনের খাবার মান।

গেস্টরুম প্রথা উচ্ছেদ: গেস্টরুম প্রথা উচ্ছেদের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার পুরোপুরি বাস্তয়ন ঘটেনি। ছাত্রলীগের দুএকটি গ্রুপে গেস্ট রুম প্রথার পরিমাণ কমলেও অন্যান্য গ্রুপে বিরাজ করছে একই অবস্থা। তবে গেস্টরুমে শারীরিক নির্যাতনের যে অভিযোগ উঠত তা পূর্বের তুলনায় অনেকটা কমে এসেছে। প্রথম বর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয় নিয়মিত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগদান ও বড় ভাইদের সালাম ও করমর্দন করার জন্যে।

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2021 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon