ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)'র ব্যানারে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর ও ছাত্রলীগ নেতারা। রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে জাতির পিতাকে স্মরণ করেছেন তারা। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী, ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদ তথা ভিপি নুরের সঙ্গে বরাবরই সাপে নেউলে সম্পর্ক থাকায় ডাকসুর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এক সঙ্গে দেখা যায় না ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত নেতাদের। ফলে অনেকটা হ্যালির ধূমকেতুর মতই দীর্ঘ বিরতির পর এক সঙ্গে দেখা গেল বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় এই ছাত্রনেতাদের।
ডাকসুর ২৫ পদের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে ভিপি নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে আকতার হোসেন ছাড়া বাকি ২৩টি পদেই নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচনের পর থেকে এ দুই সংগঠনের নেতাদের কার্যত পৃষ্ঠপ্রদর্শন অবস্থায় দেখা গেছে অধিকাংশ সময়। তবে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনার পাশাপাশি টেলিভিশন টকশোতে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতেও দেখা গেছে তাদের।
গত মাসে মহান শহীদ দিবেসও (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ মিনারে আলাদাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভিপি নুর ও ডাকসুর ছাত্রলীগ নেতারা। এর আগে গত বছরের ১৬ অক্টোবর বেশ হাসি মুখে সাইকেল চালাতে দেখা গিয়েছিল ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীকে। তবে তার আগে ওই দিনই টিএসসিতে জোবাইকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একমঞ্চে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন তারা দুজন।
এর আগেও ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরু এবং জিএস গোলাম রাব্বানীর মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিতে দেখা যায়। রাজনীতির মাঠে দা-কুমড়া সম্পর্ক থাকলেও একটি টিভি টকশোতে গিয়ে অফ এয়ারে হাসিমুখে একে অপরকে আলিঙ্গন করতেও দেখা যায়। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়ার পর কেউ কেউ তাদের এই সম্পর্ক কে বলছেন 'দিনে মারামারি রাতে গলাগলি' হিসেবে।
তবে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে ডাকসু ভবনে নিজ কার্যালয়ে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন ভিপি নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা। ওই হামলার পর দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে। হামলার জন্য এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে দুষে আসছেন ভিপি নুর। হামলার পর ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীও ডাকসু থেকে ভিপি নুরকে অবাঞ্চিত বলে ঘোষণা করেছিলেন।
ওই ঘটনার পর ডাকসুর সর্বশেষ বৈঠক ব্যতিত অন্য কোন অনুষ্ঠানে তাদের এক সঙ্গে দেখা যায়নি। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে ডাকসুর পক্ষ থেকে একসঙ্গে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা। জানা গেছে, আগেরদিন সোমবার (১৬ মার্চ) এজিএস সাদ্দাম হোসেন ভিপি নুরকে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আহ্বান জানালে ভিপি তাতে সম্মত হন।
এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আমরা প্রথমেই ডাকসুর পক্ষ থেকে একত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারপর আর একত্রে শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। বিভিন্ন দিবসে ছাত্রলীগের অংশের নেতারা নিজেদের মত করে আলাদা হয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আমি আশা করছি, এখন বাকি যে সময়টা আছে সে সময়ে ডাকসুর সকল অনুষ্ঠানে সবাই একসঙ্গে অংশ নিবে।
অনেকটা একই সুরে 'বাকি সময়টা একসঙ্গে পার করার ইচ্ছা' প্রকাশ করে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ডাকসুর সম্মিলিত শ্রদ্ধা নিবেদন আমার কাছে অনেক ভালো লাগছে।
ডাকসু নির্বাচনের পর সবাই এক সঙ্গে অংশ নিলেও পরে কেন আলাদা হয়ে গেলেন- প্রশ্নের উত্তরে এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা এক সঙ্গেই ছিলাম। এখন কেউ যদি আলাদা হয়ে যায় সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ডাকসুর বাকি সময়টাতে ভিপি নুর এক সঙ্গে থাকার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সে বিষয়ে সাদ্দাম বলেন, আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে প্রত্যশা করব তিনি যেন 'আমি' থেকে 'আমরা'তে বেরিয়ে আসেন। ছাত্র রাজনীতির এক্সটেনশন হিসেবে তিনি যে দূতাবাস কেন্দ্রীক রাজনীতি করছেন তার থেকেও বেরিয়ে তিনি যেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেন।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন