আমার বঙ্গবন্ধু প্রতিযোগিতা
চন্দ্রিকা মণ্ডল, সাইফুল ইসলাম খান ও ইসরাত জাহান নূর ইভা (বাম থেকে)
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক বক্তব্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তিন কৃতী শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান নূর ইভা, মোঃ সাইফুল ইসলাম খান এবং চন্দ্রিকা মণ্ডল। তারা তিন জনই ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি’র (ডিইউডিএস) বিতার্তিক। সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষের অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায় সারাদেশ থেকে বিজয়ী ১২জনের মধ্যে তিন জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিজয়ীরা নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। গত ১৩ ও ১৪ জুলাই নিজ নিজ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পুরস্কারের এক লক্ষ টাকার স্মারক চেক গ্রহণ করেন ইসরাত জাহান নূর ইভা, সাইফুল ইসলাম খান ও চন্দ্রিকা মণ্ডল।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ বিষয়ের ওপর বক্তব্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এতে অনলাইনে সারা দেশ থেকে সকল বয়সের প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই পর্বে সেরা ৪০ জনকে শর্টলিস্টে রাখা হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকে ৫ জুলাই বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।
এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাত জাহান নূর ইভা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও সংগ্রামকে বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়াস হিসেবে ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ প্রতিযোগিতাটি অবশ্যই একটি প্রশংসনীয় ও অভিনব উদ্যোগ। এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবো মুজিব শতবর্ষ আয়োজক কমিটি, আইসিটি ডিভিশনকে।এখানে দেশসেরা ১২ জনসহ শর্টলিস্টেড ৪০টি ভিডিওর প্রতিটিতেই বঙ্গবন্ধুর অবদান ও কীর্তি তুলে ধরার সুন্দর প্রয়াস ছিলো। এ ধরনের আয়োজন একদিকে যেমন তরুণ প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে ও চর্চা করতে সাহায্য করে তেমনিভাবে দেশপ্রেমেও উদ্বুদ্ধ করে বলে আমি বিশ্বাস করি।এখানে শর্টলিস্টেড ৪০ জনের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন প্রতিনিধি ছিলো এবং আমার আপন দুইবোন ইলমা আক্তার এবং ইসমত আরা এ্যানিও ছিলো শর্টলিস্টেড যা সত্যিই আমার জন্য গর্বের বিষয় এবং অবশ্যই সেখানে পুরস্কৃত হওয়ার আনন্দটা অবর্ণনীয়।”
নিজের অনুভূতি জানিয়ে সাইফুল ইসলাম খান বলেন, “একজন বিতার্কিক হিসেবে এই বিজয় আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। সাধারণত দেশে বিতর্ক বা প্রতিযোগিতামূলক বক্তব্যের জন্য এত বড় বাজেটের কোন আয়োজন হয়নি। মুজিব শতবর্ষে এমন একটি আয়োজনের জন্য আমি আইসিটি ডিভিশনকে ধন্যবাদ জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে বড় ভাইদের নানা সাফল্য বয়ে আনার খবর দেখতাম প্রথম বর্ষে থাকতে। মনে হত একদিন আমিও যদি তাদের মত আমার প্রতিষ্ঠানের পোস্টারবয় হতে পারতাম। সারাদেশব্যাপী আয়োজিত বড় কলেবরের এই আয়োজনে সেই স্বপ্নটিকে ছুঁয়ে দেখা হল, এই অনুভূতি অবর্ণনীয় খুশি হয়ে মানসপটে রয়ে যাবে অনেক দিন। আমি প্রত্যাশা করব আগামীতেও যেন তরুণদের মধ্যে দেশের ইতিহাস নির্ভর আয়োজন হিসেবে এর ধারাবাহিকতা গড়ে ওঠে। সেই ছোট্টবেলা থেকে আজ অব্দি যারা আমার শিক্ষক ছিলেন, আনন্দ-সংকটে নানা সময়ে পাশে থেকে প্রেরণা দিয়ে গেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ জানাই। বঙ্গবন্ধুর মত করে যেন বাঙালির চিত্তকে ধারণ করতে পারি, এই মাটির প্রতি দরদ দেখাতে পারি নিজের কাছে আগামীতে আমি সেই প্রত্যাশা রাখি।”
প্রসঙ্গত, ঢাবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ ও এমএ সম্পন্ন করা ইসরাত জাহান নূর ইভা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল ডিবেটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিতর্কের পাশাপাশি জড়িত আছেন আবৃত্তির সাথেও। ছোটবেলায় আবৃত্তি শিখেছেন শিশু একাডেমীতে। তবে বিতর্কের হাতেখড়ি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে। সেখানে ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। বিতর্ক করেছেন ঢাকা সিটি কলেজ ডিবেটিং ক্লাবের হয়ে।
দলীয় ও ব্যক্তিগত অসংখ্য অর্জনের মাঝে রয়েছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জাতীয় নারী দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দলীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় বারোয়ারি বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ল্যাপটপ ও শিরোপা জয়, ডাকসু আয়োজিত নারীদিবস কেন্দ্রিক বক্তৃতায় চ্যাম্পিয়ন, কলা অনুষদ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় শিরোপা বিজয়, ডিইউডিএস আয়োজিত ‘ঢাকা উৎসবে’ বারোয়ারির চ্যাম্পিয়ন, একই সংগঠনের আয়োজেনে জাতীয় শোকদিবস বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, সূর্যসেন বিতর্কধারার বারোয়ারি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, শহীদুল্লাহ হল আয়োজিত শোকদিবস বারোয়ারিতে চ্যাম্পিয়নসহ বহু বিতর্কে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কবি সুফিয়া কামাল হল বৃত্তি ২০১৯’ লাভ করেছিলেন ইভা।
অন্যদিকে পুরস্কার বিজয়ী সাইফুল ইসলাম খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ডিবেটিং ক্লাবের (এফআরডিসি) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সংগঠনের সাথে সক্রিয় ছিলেন। মুজিব শতবর্ষে আমার বঙ্গবন্ধু প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে লক্ষ টাকার সম্মাননা ছাড়াও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন আয়োজিত নদী বক্তৃতায় প্রথম স্থান লাভ করে ল্যাপটপ ও শিরোপা অর্জন করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নানা আয়োজনে অংশ নিয়ে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট, সনদ ও বই উপহার পেয়েছেন।
ঢাবির কবি জসীমউদদীন হল ডিবেটিং ক্লাব আয়োজিত ১০ম জেলহত্যা দিবস আন্তঃক্লাব বারোয়ারী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত বিজয় বিতর্ক উৎসব-২০২০ এর রানার আপ, ডিবেটিং সোসাইটি অব এইচএসটিইউ (হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) আয়োজিত জাতীয় বারোয়ারী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২০ এর রানার আপ হয়েছেন এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইয়ুথ এগেইনস্ট হাঙ্গার (ডুয়াহ) আয়োজিত প্রবন্ধ লেখা প্রতিযোগিতা-২০২০ এ প্রথম স্থান, চলতি বছর ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত তারুণ্যের বাংলাদেশ ভাবনা শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়, ওআরডিবি-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শতবর্ষ লেখনী প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান, টিআইবি (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ)- ইয়েস গ্রুপ (ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট) আয়োজিত ‘কন্টেন্ট রাইটিং’ প্রতিযোগিতা ২০২১ এ প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এছাড়াও ২০১৮ সালে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড পুরস্কার’, একই বছর সন্ত্রাস নিমূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে ত্বকী পদক লাভ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় সারাদেশে প্রথম, ভাষা আন্দোলনের স্থপতি সংগঠন তমদ্দুন মজলিস আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ স্কুল, কলেজ জীবনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের আয়োজনে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। বিতর্ক ছাড়াও সাংবাদিকতা করেছেন দৈনিক যুগান্তরে, ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন অনলাইন পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট কম ও বাংলাদেশ জার্নালে। মতামত কলাম লিখেছেন প্রথম সারির বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায়। নানা সময়ে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন টেলিভিশন বিতর্ক ও টকশোতেও।
অপর বিজয়ী চন্দ্রিকা মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি জাতীয় পর্যায়ে রবীন্দ্রসংগীতে চারবার পুরস্কৃত হয়েছেন (দুইবার দ্বিতীয় স্থান এবং দুইবার তৃতীয় স্থান)। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় স্কুলপর্যায়ে দলগতভাবে প্রজেক্ট উপস্থাপনে ২০১৬ তে জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান লাভ করেন। চন্দ্রিকা স্কুল-কলেজ জীবনে গান ও বিতর্কের নানা শাখায় বহু পুরস্কার লাভ করেছেন।
বিভাগীয় পর্যায়ে (বরিশাল) বিতর্ক ও আবৃত্তির জন্য বহু পুরুস্কার ও সনদ লাভ করেছেন। এর মধ্যে বরিশাল ডিবেট ওয়ারিয়র্স কর্তৃক আয়োজিত সনাতনী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দলীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন ও শ্রেষ্ঠ বক্তা, পিরোজপুর বাগ্মিতা ও বিতর্ক সংসদ কর্তৃক আয়োজিত সনাতনী-সংসদীয় ও বারোয়ারী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সব কটি পর্বে দলীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন ও শ্রেষ্ঠ বক্তা, স্কুল পর্যায়ে সমকাল সনাতনী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দলীয়ভাবে রানার আপ, দুর্নীতি দমন কমিশন আয়োজিত সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রানার আপ এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপস্থিত বক্তৃতা ও বারোয়ারী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এছাড়া ২০১৮ সালে পিরোজপুর সরকারি মহিলা কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় আটটি বিষয়ে (চারটি গানে, দুটি বিতর্কে, দাবা ও স্মৃতি শক্তি পরীক্ষায় একটি করে) প্রথম হয়ে কলেজের শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন চন্দ্রিকা।