Bangla Runner

ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ | বাংলা

শিরোনাম

বিশ্বের বৃহত্তম সাত স্টেডিয়াম যুদ্ধ লাগলেই কেন বাড়ে স্বর্ণের দাম? তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম বিতর্কের বিষয় ব্যাংক বিতর্কে শব্দ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে একজন ভাল লেখক হতে চাইলে এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নজরে সুন্দরবন পরাগায়ন কাকে বলে? শৈবাল কী?
Home / ক্যাম্পাস

সঙ্গে পিস্তল রাখতেন ঢাবি উপাচার্য হার্টগ!

এম.এস.আই খান
শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১ Print


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ সঙ্গে পিস্তল রাখতেন। এমন তথ্য উঠে এসেছে সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখিত ‘স্যার ফিলিপ হার্টগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য’ বইতে। তবে সেই পিস্তল একদিনের জন্যও তিনি প্রকাশ্যে আনেননি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের কেউই তা জানতেন না।

যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর গৌরবের যাত্রা শুরু করে সে সময় সর্বত্র ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফত আন্দোলন চলমান ছিল। একদিকে গান্ধীর নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অন্যদিকে ছিল সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা। ফলে ফিলিপ হার্টগ যখন দায়িত্ব নেন সে সময়টি ছিল বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তাল সময়। বুদ্ধদেব বসুর ‘আমার ছেলেবেলা’ বই থেকেও এর সাক্ষ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘ঢাকাও সেই সময়ে ছিল বঙ্গীয় সন্ত্রাসবাদের রাজধানী।”

১৯২০ সালে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ছিল স্কুল-কলেজ বর্জন। ফলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালেয়ের বহু শিক্ষার্থী তখন লেখাপড়া ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এমনকি ১৯২১ সালের ১ জুলাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সে দিনটিও ধর্মঘটের বাইরে ছিল না। ঢাকার প্রতিটি পাড়া-মহল্লা তখন ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে মুখরিত।

এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যখন ফিলিপ হার্টগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেন, তখন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়া ছিল স্বাভাবিক বিষয়। বিশেষ করে তিনি ছিলেন ব্রিটিশদের অংশীদার। ফলে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করা ফিলিপও আক্রমণের শিকার হতে পারেন এমন শঙ্কা অস্বাভাবিক ছিল না। নিরাপত্তার জন্য তাঁর কাছে একটি রিভলবার থাকলেও ভীতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কখনোই তা প্রদর্শন করেননি এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো পাঁচ বছরের কর্মজীবনে সে কথা কেউ-ই জানতে পারেননি।

এ সম্পর্কে সৈয়দ আবুল মকসুদ তাঁর ‘স্যার ফিলিপ হার্টগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য’ বইয়ের ৯১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “অনুশীলন-যুগান্তর প্রভৃতি দলের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, বিশেষ করে ব্রিটিশনিধন কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় তখন অনেক ইংরেজই তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে রিভলবার বা পিস্তল রাখতেন। হার্টগেরও একটি রিভলবার ছিল। সেটা কেউ কখনো দেখেনি বা তার একটি গুলিও খরচের প্রয়োজন হয়নি।” 

জানা যায়, লন্ডনে ফিরে যাওয়ার আগে পিস্তলটি তিনি ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর অফিসে জমা দিয়ে যান। তাঁর পিস্তলটির নম্বর ছিল ৩৫২৯৫ এবং ৪৫৫ বাই ৪৭৬। 

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ বছর রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকরি করা হার্টগ ঢাকায় এসে নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন শিক্ষা বিস্তারে। সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা থেকে আরো জানা যায়, উপাচার্য ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষকদের পাঠদান সম্পর্কে জানতেন। আর গ্রন্থাগার থেকে রেজিস্ট্রি খাতা আনিয়ে দেখতেন কত ছাত্র বই ধার নিয়েছে! ইংরেজি জানে না এমন মানুষদের সঙ্গে তিনি ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতেন। জানা গেছে, প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের সঙ্গে তিনি কুশল বিনিময় করতেন বাংলায়।

সাম্প্রতিক সময়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের ফাঁস হওয়া এক কথোপকথনের সূত্রধরে তার পিস্তলকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা চলছে সর্বত্র। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) ​ড. মেসবাহ কামাল ​বাংলা রানারকে বলেন, ​“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য আর ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ এ দুইয়ের মধ্যে আসলে কোন তুলনাই হয় না। কোন দিক দিয়েই তুলনা হয় না। না মন-মনন, যোগ্যতা -এগুলোর কোন বিষয়েই কোনটার তুলনা হয় না।”

“ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের যে ভাষা, যে শব্দ চয়ন; এটা ত মনে হচ্ছিল যেন কোন একজন মাস্তান কথা বলছেন। পুরুষ মাস্তানরাও এ রকম ভাষা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহার করে না। ক্ষমতার কি দম্ভ! রাজনৈতিক মন্ত্রী-সচিবদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পুষ্ট হয়ে ওঠার বিষয়ে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, সেটা আসলে গোটা ব্যবস্থাটা যে কতখানি শূন্যতার উপর দাঁড়িয়ে আছে সেটাকে প্রকাশ করে।”

তিনি বলেন, ‘‘এরা আসলে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার কারণ এরা যদি এক-একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বসমাসীন হতে পারে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বারোটা বাজানোর জন্য আর দ্বিতীয় কাউকে প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুধু নয়, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ইমেডিয়েটলি সেটা নেয়া উচিত।”

“তার কাছে আদৌও পিস্তল ছিল কি না জানি না, যদি সত্যিই তার কাছে পিস্তল থেকে থাকে তাহলে এ রকম পিস্তল (লাইসেন্সকৃত) কার পাওয়ার কথা? কেন পায় পিস্তল সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় যে নীতি সেটাও নতুন করে মূল্যায়ন করা উচিত। পিস্তল ত নিরাপত্তার জন্য দেয়ার কথা। সেটাতো অন্যের নিরাপত্তার হুমকি হওয়ার কথা না। যে অশ্লীল ভাব-ভাষা ব্যবহার করেছেন। এটা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত কোন মানুষের ভাব-ভাষা হতে পারে না। আমি লজ্জাবোধ করছি।” যোগ করেন ড. মেসবাহ কামাল।

আরো পড়ুন: 

ঢাবির প্রথম উপাচার্য হার্টগ বুঝেছিলেন বাঙালি সমাজে তদবির কী জিনিস!

অন্ন জোটেনি,পায়ে ‍জুতা ছিল না সেই ছেলে হয়েছিলেন ঢাবির উপাচার্য 

স্যার এ এফ রহমান ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2021 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon