ছাত্রলীগের সম্মেলন আসন্ন
সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার । ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের বিষয়টি ইতিমধ্যে এজেন্ডাভুক্ত হওয়ায় এই মুহুর্তে সম্মেলন কবে হবে এটি যতটুকু আলোচনায় আছে এর চেয়েও বেশি আলোচনায় পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্বে কারা আসছেন। শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিভিন্ন নেতা ও তাদের আশেপাশের লোকদের দৃষ্টিতে আসার জন্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন আর ধানমন্ডির দলীয় হাইকমান্ডের কার্যালয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের উপস্থিতি এখন চোখে পড়ার মত।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের ছোট থেকে মধ্যম পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিশেষ করে যারা এই সম্মেলনের পর বিভিন্ন জেলা, উপজেলার প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারাও মরিয়া হয়ে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে সম্ভ্যাব্য নেতাদের সাথে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ না করায় আসন্ন সম্মেলনে কোন্ প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করা হবে তা জানার জন্য সবার দৃষ্টি এখন ২৮ অক্টোবরের আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের দিকে।
আলোচিত প্রার্থী কারা?
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ দুটি পদে মোট চারজন নেতা কারা হবেন সেটি এখনো কোনো ইঙ্গিত না মিললেও ক্যাম্পাস ও সম্মেলন কেন্দ্রীক আবহে ঘুরেফিরে বেশ কিছু প্রার্থীর নাম শোনা যায়। এদের মধ্যে একেকজন একেক রকম সমীকরণে এগিয়ে থাকা প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচিত হচ্ছে। দেশের শীর্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতি মূলত বিভিন্ন অঞ্চল বিভাজিত। অঞ্চল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও অঞ্চল বিবেচনায় কমিটি হওয়ার নজির খুব একটা নেই।
তবে গত বেশ কয়েকটি কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নেতৃত্ব নির্বাচনের পর সেই নেতার অঞ্চলকে কেন্দ্র করে একটি বলয় গড়ে ওঠে। বৃহত্তর ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গ (বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী), বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও খুলনা প্রভৃতি অঞ্চলগুলো থেকেই বিভিন্ন সময়ে নেতা নির্বচিত হয়েছে। এর বাইরেও ঢাকা ও সিলেট অঞ্চলেরও প্রার্থী থাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলনে। হিসাব বলছে, ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। নিয়মানুসারে ২০২০ সালে সংগঠনটির সম্মেলন হবার কথা থাকলেও কভিড পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে। আর এ কারণে এবার প্রার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি।
নানান সূত্রের সাথে দীর্ঘ সময় কাজ করে ও কথা বলে এবারের সম্মেলনে সব অঞ্চল মিলে যেসব প্রার্থীর নাম জোরেসোরে আলোচনায় আছে তারা হলেন- ঢকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, বরিকুল ইসলাম বাঁধন, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক রনি মুহাম্মদ, আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান শাহাদাত, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, উপ কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল বাশার জয় ও সাইদুর রহমান উজ্জ্বল,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আহম্মেদ সোহান, মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান শাহীন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি এস এম রাকিব সিরাজী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক আল-আমিন রহমান, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, উপ প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মেশকাত হোসেন, হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশির, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত, উপ ছাত্রবৃত্তি সম্পাদক আমির হামজা প্রমুখ।
নারী নেত্রীদের মধ্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তিলোত্তমা সিকদার, ফরিদা পারভীন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশির নামও আলোচনায় আছে। এর বাইরে আরো অনেকেই প্রার্থী হিসেবে নিজেদেরকে জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্য থেকে দুজনকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ও দুজনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হতে পারে।
সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা ও নেতৃত্ব নির্বাচনের এবারের প্রক্রিয়া স্পষ্ট হলে প্রার্থীদের ব্যাপারে আরো সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে ছাত্র লীগের এবারের সম্মেলনের নেতৃত্ব নির্বাচনের বয়সের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হলে অনেক কিছু পরিস্কার হয়ে যাবে। তবে বিরোধী দলে থাকার সময় থেকেই যেহেতু বয়স ২৯ করে মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকে নির্বাচিত করা হয়েছিলো সেই বিবেচনায় ক্ষমতা চলাকালীন বর্তমান সময়ে বয়স বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই বলেই অনেকে ধারণা করছেন।
ছাত্রলীগের সর্বশেষ ৪টি সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ২৬তম জাতীয় সম্মেলনে ব্যাপক আলোচিত ও গ্রহনযোগ্য প্যানেল হিসেবে রফিক কতোয়াল ও সাইফুজ্জামান শেখর আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত বয়সের কারণে নেতৃত্বে আসা হয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই ২৭তম জাতীয় সম্মেলনে সেই সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা কেন্দ্রীয় কমিটির প্রার্থী হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন। বিশেষ করে এক-এগারোর সময়ে সাহসী ভূমিকার জন্য তারা ব্যাপক আলোচিত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বয়স জটিলতায় বাদ পড়েন টিপু-বাদশাও।
অন্যদিকে ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে বিরোধী দলের সময়ের নির্যাতিত ও সারা দেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য আলোচিত প্রার্থী ছিলেন তৎকালীন ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবীর রাহাত। নেতৃত্বে আসার জোর গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ে যান শামসুল কবীর রাহাতও। ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে সমসাময়িক ছাত্ররাজনীতিতে সবচেয়ে মেধাবী ও বিচক্ষণ ছাত্রনেতা হিসেবে আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান। নানান সমীকরণে শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পারেননি সায়েম খানও। তবে এমন বাদ পড়ে যাওয়া কেউ কেউ পরবর্তীতে দলীয় হাইকমান্ডের ‘গুডবুক’ -এ থেকে মূল্যায়িত হয়েছেন। সে হিসেবে এবারও এমন কিছু ঘটবে নাকি অন্য কিছু হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন