কোন কোন সংগঠনে ছাত্র রাজনীতির বয়স ৩০ বছর। বাংলাদেশে চাকরিতে প্রবেশের সর্বশেষ বয়সও ত্রিশ বছর। ছাত্র সংগঠনগুলোর শীর্ষ দু’ চার জনের বাইরে অন্যদের খুব একটা, ‘খাওয়া নাই’। ত্রিশ বছর পর্যন্ত রাজনীতি করেও বহু ছাত্র তার কাঙ্খিত পদে যেতে পারে না।
অন্যদিকে চাকরির বয়সও শেষ। তখন সে এমন একটা জীবনে প্রবেশ করে যে জীবনে তার মত হতাশ, তার মত বিধ্বস্ত আর কেউ থাকে না। অথচ সে কিন্তু দলের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে স্লোগান ধরেছে। অথচ তার মত বিক্ষিপ্ত জীবন কিন্তু আর কেউ গড়ে না। এই যে একটা অনিশ্চিত জীবন, ভয়াবহ জীবন। তাই ছাত্র রাজনীতির বয়স কমাতে হবে।
হয় চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়াতে হবে, না হলে এই চাকরির বয়স যত থাকে তার অন্তত তিন থেকে চার বছর আগে ছাত্র রাজনীতির ইতি টানতে হবে। অর্থাৎ ত্রিশ বছর যদি চাকরির বয়স থাকে তাহলে ছাত্র রাজনীতির বয়স হতে হবে ২৬, বড়জোর ২৭। যাতে সে ওখান থেকে ব্যর্থ হয়ে ফিরলেও তার জীবনটা অনিশ্চিত যাত্রার মধ্যে না পড়ে।
এরপর আছে বিবাহের কথা। বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, ২১ বছর বয়সে আপনি বিয়ে করতে পারবেন। যদি মেয়ে হন তবে ১৮ বছর বয়সে বিয়ে করতে পারবেন। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি বলছে, আপনি যদি বিবাহিত হন তাহলে আপনি রাজনীতি করতে পারবেন না। অর্থাৎ আমাদের ছাত্র রাজনীতির নিয়মটা সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। একজন মানুষের ছাত্রত্বের সাথে বিয়ের কী সম্পর্ক থাকতে পারে?
কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হল থেকে একটা নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। সেখানে বিবাহিত হলে কোন ছাত্রী আর হলে সিট পেতেন না। তখন সবাই বলেছিল, একজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত হওয়া না হওয়ার সাথে তার শিক্ষার্থী পরিচয়ের সম্পর্ক কী? তীব্র সমালোচনার মুখে ওই নিয়ম বাতিল করেছে প্রশাসন।
একই প্রশ্ন তো ছাত্র রাজনীতির বেলাতেও প্রযোজ্য। এই রাজনীতি করতে যেয়ে একজন শিক্ষার্থী তার চাকরির বয়স হারাচ্ছে, প্রিয়তম প্রেমিকাকে হারাচ্ছে। কারণ হয় বিয়ে নয় রাজনীতি, যে কোন একটাকে বেঁছে নিতে হবে।
এই একই কারণে ছাত্রাবস্থায় ‘বিবাহিত’ পরিচয় হয়ে গেছে লজ্জাজনক নেতিবাচক কোন কাজ! অথচ এটা একটা বৈধ সম্পর্ক, এটাকে উৎসাহিত করা উচিত। রাজনীতি করার কারণে বহু ছাত্রনেতার পছন্দের মানুষটিকে অন্যের সংসারী হতে হচ্ছে। প্রিয় প্রেমকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। এর চাইতে দুঃখজনক আর কিছু হয় না। এই ব্যবস্থা থেকে আমাদের বের হতে হবে।
এম.এস.আই খান
২০ অক্টোবর ২০২২