Bangla Runner

ঢাকা , মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫ | বাংলা

শিরোনাম

বিখ্যাতদের ১০ উক্তি টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদাবাজ বদল হয়েছে, চাঁদাবাজী সিস্টেমের কোনো বদল আসেনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি রম্য বিতর্ক: ‘কুরবানীতে ভাই আমি ছাড়া উপায় নাই!’ সনাতনী বিতর্কের নিয়মকানুন গ্রীষ্ম, বর্ষা না বসন্ত কোন ঋতু সেরা?  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ই-মেইল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫ মসলা Important Quotations from Different Disciplines
Home / বাংলাদেশ

বছর ঘুরলেই বাড়ে বাড়ি ভাড়া:

ঢাকা’র বড় সমস্যা এখন ‘থাকা’

এম.এস.আই খান
সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২০ Print


ঢাকা। নামটির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে কত শত লক্ষ-কোটি মানুষের হাসি-কান্নার কথা। বেকার, ভাগ্যান্বেষী, বিদ্যান্বেষীসহ নানা প্রয়োজনে ক্রমেই ঢাকার জনসংখ্যা যেন বাড়ছেই। ফলে ‘ঢাকা’র সবচেয়ে বড় সমস্যাটির একটি হল ‘থাকা’। মাত্র এক হাজার ৪৬৩.৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই শহরে ঘুমাতে হয় প্রায় দুই কোটি মানুষকে। গেল বছরের জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরের তালিকায় ৭ম স্থানটি দখল করেছে ঢাকা। আর ২০১৭ সালে জাতিসংঘের বসতিসংক্রান্ত উপাত্তের বিচারে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। ফলে বাসস্থানের সংকট ঢাকার এক অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই গাদাগাদি করে বাস করাই গা-সওয়া হয়ে গেছে ঢাকার মানুষের।

ঢাকা যেন তার নামের মত করেই তার বাসিন্দাদের আবদ্ধ করে রেখছে। একদিকে সংকীর্ণ বাসস্থান অন্যদিকে উচ্চ ভাড়া এই দুই চাবুকের কষাঘাতে ঢাকাবাসী এখন হাসফাস করছে। তার উপর প্রতিটি নতুন বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়ানোর খড়গ মানুষকে অর্থ নৈতিক নির্যাতনের মুখে ফেলেছে। ঢাকায় এখন এমন অনেক বাড়িওয়ালা আছেন যারা কর্মজীবনে অন্য কিছু্ করেন না। শুধু ফ্লাটের ভাড়া তুলে সংসার চালান। ফলে ফি বছর ভাড়া বাড়ানোর চেষ্টা চালান। তাদের এই চেষ্টা বহু মানুষের তেষ্টা লাগিয়ে দিচ্ছে।

আধুনিক যাযাবর: à¦¢à¦¾à¦•à¦¾ শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ভাড়াবাসায় থাকেন। ফলে ঢাকা যেন এখন আধুনিক যাযাবরের শহরে পরিণত হয়েছে। আরব ভূখণ্ডের যাযাবরদের মত করেই নিদারুণ কষ্টে বছর কাটে ভাড়াটিয়াদের। নির্দিষ্ট বাসভূমি না থাকায় বিড়ম্বনাই যাদের নিত্য সঙ্গী। বছর ঘুরলেই ভাড়া বাড়ে সেই সঙ্গে বাসা বদলের তাড়া বাড়ে ভাড়াটিয়াদের। ফলে সাধ্যের মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে বছর বছর মানুষকে ঠিকানা বদলাতে হয়। বাসা বদলের যন্ত্রণা ও খরচ তাই ভাড়াটিয়াদের জন্য অত্যাচারের নতুন খড়গ। নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য এই শহরে আশ্রয় খোঁজা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চবিত্তের জন্য সুরম্য অট্টালিকা ও বিলাসবহুল ফ্লাট যতটা তৈরি হচ্ছে বাকি দুই শ্রেণির জন্য ততটা নয়। 

ফলে উচ্চমূল্যের বহু ফ্লাট রাজধানীতে এখন ফাঁকা পড়ে থাকলেও সংকট রয়েছে নিন্ম ও মধ্যবিত্তের থাকার জায়গার। আর তাই বছর ঘুরতেই নোটিশ ঝোলে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির। নিরুপায় ও বাধ্য হয়েই এ দুই শ্রেণির মানুষকে অনেকটা যাযাবরের মত করেই বাসস্থান বদলাতে হয়। অথচ বাসস্থান প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই বিষয়ে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশের সংবিধানে সব নাগরিকের আবাসনের  à¦•à¦¥à¦¾ বলা হয়েছে (অনুচ্ছেদ ১৫ক)। সংবিধানেরে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৬ সালের জাতীয় গৃহায়ণ নীতিতে সাধ্যের মধ্যে সবার আবাসনের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে, বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য। কিন্তু দেশের রাজধানী শহর ঢাকায় এখন সবচেয়ে বেশি আবাসন সংকটে রয়েছে এই দুই শ্রেণির মানুষ।

বাড়িওয়ালার কথাই ঘর ভাড়ার আইন: “সাহেব কহেন, ‘চমৎকার! সে চমৎকার’! মোসাহেব বলে, ‘চমৎকার সে হতেই হবে যে! হুজুরের মতে অমত কার’?” জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের  ‘সাহেব ও মোসাহেব’ কবিতার মত করেই এখন চলছে দেশের বাড়ি ভাড়া আইন। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ থাকলেও তার কোন তোয়াক্কা নেই কোথাও। আইনের কোন কার্যকারিতা না থাকায় বাড়িওয়ালার ইচ্ছে মতই চলছে সব।  à¦¤à¦¾à¦° মতে অমত হলে বিনানোটিশে বাড়ি ছাড়তে হবে। লিখিত চুক্তি, বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ, ভাড়া আদায়ের পদ্ধত্তি, বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই। ফলে এই আইনটি সুরক্ষা দিতে পারছে না ভাড়াটিয়াদের। ফলে বাসা-বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে যাচ্ছেতাই নীতি চালান বাড়িওয়ালারা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এক প্রতিবেদন মতে, গত ২৫ বছরে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় রাজধানীতে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ।

ভাড়াটিয়া নামলেই বাড়ে ভাড়া: ঢাকার বেশির ভাগ মানুষই এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন। শিক্ষা কিংবা জীবিকার খোঁজে ঢাকায় আসা অধিকাংশ মানুষই তাই ভাড়া বাসায় থাকেন। নানা করণে ভাড়াটিয়ারা বাসা পরিবর্তন করলেই ছেড়ে যাওয়া বাসার ভাড়া বাড়িয়ে দেন বাড়িওয়ালারা। নতুন ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে পূর্বের ভাড়াটিয়ার চাইতে অন্তত ৫০০-১০০০ টাকা বেশি চাওয়া হয়। তবে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনানুযায়ী, কোনো বাড়ির ভাড়া দু’বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে না। বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার কাছে কোনো অতিরক্তি অর্থ দাবি করতে পারবেন না। প্রতি মাসে অবশ্যই ভাড়া নেয়ার রসিদ দিতে হবে, না হলে বাড়িওয়ালা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কিন্তু এসব নিয়ম কেবল কাগজে কলমেই। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের শুরুতে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করাকে এখন অলিখিত নিয়মে পরিণত করেছেন বাড়ির মালিকেরা। ফলে বছর বছর বাড়ছে বাড়ি ভাড়া। 

বেতনের অর্ধেক যাচ্ছে বাড়ি ভাড়ায়: à¦†à¦‡à¦¨à§‡à¦° প্রয়োগ না থাকায় বাড়িভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির শেষ নেই। ফলে বাড়ি ভাড়ার চাপে চ্যাপ্টা হচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা বেতন পান এমন আয়ের মানুষদের বেতনের অর্ধেকটাই চলে যাচ্ছে বাড়ি ভাড়া বাবদ। ফলে পরিবারের সদস্যদের অনান্য চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে  à¦¨à¦¿à¦¨à§à¦® মধ্যবিত্ত মানুষদের। খরচ কমাতে অনেকেই কর্মস্থল থেকে বেশ দূরে বাসা নিয়ে থাকেন। ফলে ঢাকার সামগ্রিক যানজট যেমন বাড়ে তেমনি বাসা দূরে হওয়ায় আয়ের একটা অংশ খরচ হচ্ছে যাতায়াত বাবদ। তেমনি একজন সোহরাব হাসান। 

তার কর্মস্থল গুলশান হলেও তিনি বাসা নিয়েছেন কর্মস্থল থেকে বেশ দূরে মোহাম্মাদপুরে। মাসে ১৬ হাজার টাকা টাকা শুধু বাড়ি ভাড়া বাবদই গুণতে হয় তাকে। সঙ্গে বিদ্যুৎ ও গ্যাস ভাড়া নিয়ে তা আরো ১৫০০ টাকার মত বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজধানীতে দুই রুমের একটি মোটামুটি মানের ফ্লাটে থাকতে এখন ১৫-২৫ হাজার টাকা গুণতে হওয়ায় তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে অনান্য ক্ষেত্রে। এর ফলে কম আয় করা বাবাতের সন্তানেরা ভাল স্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, বঞ্চিত হচ্ছেন ভাল খাবার, সময়মত চিকিৎসা ও বিনোদন থেকেও। আর এই বাড়তি বাড়ি ভাড়ার চাপে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

‘বউ’ না থাকলে বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না: à¦¢à¦¾à¦•à¦¾à§Ÿ কান্না চাপা জীবনের নাম ব্যাচেলর। অবিবাহিত ছেলে বা মেয়েদের বাসা ভাড়া দিতে চান না অধিকাংশ বাড়ির মালিক। ফলে ঢাকায় পরিবার নেই এবং অবিহাতি এমন শিক্ষার্থী বা কর্মজীবীদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ডুমুরের ফুল। অধিকাংশ পুরুষ ব্যাচেলরদের বাড়ি ভাড়া নিতে গিয়ে শুনতে হয়, বউ না থাকলে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে না। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ হল বা ছাত্রাবাসে থাকে। আর বাকি ৮৫-৯০ শতাংশই (আনুমানিক ২০ লাখ শিক্ষার্থী) বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকে। 

আর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এমন ব্যাচেলরদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সঙ্গে ব্যাচেলর গার্মেন্ট কর্মী আছেন ৫-৬ লাখ। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ ব্যাচেলর থাকেন রাজধানীতে। এই বিপুল সংখ্যক ব্যাচেলরদের থাকার জায়গা নিয়ে এক কঠিন জীবন যুদ্ধের মোকাবিলা করতে হয়। অধিকাংশ ব্যাচেলরদের ভরসা হয়ে ওঠে বিভিন্ন বেসরকারি বাণিজ্যিক হোস্টেল ও মেসে। সেখানেও ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। বিশেষ করে রাজধানীর ফার্মগেট ও তার আশপাশের এলাকায় এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে বাসা ভাড়ার হার বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো মনিটরিং নেই।

অন্যদিকে মেয়ে ব্যাচেলর বা অবিবাহিত মেয়েদের জন্য বাসা পাওয়া আরও ভোগান্তির ব্যাপার। ছেলে ব্যাচেলরদের সব ভোগান্তীই মেয়ে ব্যাচালরদের সঙ্গী, সঙ্গে নিরাপত্তা সংকট উপরি পাওনা। যে সমস্ত বাসাতে মেয়ে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেওয়া হয় সেখানে থাকে সান্ধ্য আইনও। সন্ধ্যার পর তাদের চলাচলে আরোপ করা হয় নিষেধাজ্ঞা। ফলে যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং মাস্টার্স করেন কিংবা যাদের অফিস রাত ৮টায় শেষ হয় তাদের এই শহরের বাকে বাকে থাকা যানজট ছাড়িয়ে বাসায় ফিরতে অনেক সময়ই ৯টা বা ১০টা বেজে যায়। এমন মেয়ে ব্যাচেলরদের বাড়ি ছাড়ার নোটিশ শোনার মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হয় যখন তখন।

তবে বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ, ‘ব্যাচেলররা ফ্ল্যাট নষ্ট করে ফেলেন। তারা বাড়িঘরের যত্ন নেন না।’ এ সব কারণে বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলরদের ভাড়া দিতে চান না। ব্যাচেলর ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া পাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনা বেশ পুরোনো হলেও সেই বিড়ম্বনাকে চরম মাত্রা দিয়েছে জঙ্গি আতঙ্ক। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে কয়েকজন তরুণের জঙ্গি হামলার ঘটনায় বাড়ির মালিকদের মধ্যে ‘ব্যাচেলর খেদাও’ মনোভাব দেখা যায়। ওই হামলার পর বহু বাড়ির মালিক ব্যাচেলরদের ভাড়ার দেওয়ার ইতি টেনেছেন। এ ছাড়াও হতাশা কিংবা প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার প্রবণতাও তরুণদের মধ্যে বেশি থাকায় ব্যাচেলরদের ঠাঁই দিতে চান না বাড়ির কর্তারা।

সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ মেস সংঘ দাবি জানিয়েছে, শহরে বসবাসরত ‘ব্যাচেলর’ ভাড়াটিয়াদের আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারিভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করার। ‘ব্যাচেলরদের’ হয়রানি এবং বাড়ির মালিকদের ভাড়া বাড়িয়ে অর্থনৈতিক নির্যাতন ও উচ্ছেদ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়া বাড়লেও উচ্চবিত্তের কমেছে: ক্যাব
উচ্চবিত্তের বাড়িভাড়া কিছুটা কমলেও নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের বাড়ি ভাড়ায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছে বলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০১৯ সালে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে গড়ে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। বস্তির ঘর ভাড়া বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মেস রুমের ভাড়া ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে। ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে এ বিষয়ে বলেন, ঢাকায় এখন উচ্চবিত্তের বাড়ির অভাব নেই। কিন্তু নিন্মবিত্ত ও নিন্মমধ্যবিত্তের বাড়ির চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। এর কারণ হল কাজের সন্ধানে ঢাকায় কম আয়ের মানুষের আগমন বেশি হয়েছে। ঢাকার বাইরে কর্মস্থল এবং গ্রামের জীবন ব্যবস্থাকে উন্নত করলে ঢাকার প্রতি এই চাপ কমবে। গ্রামকে করব শহর এই স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকার যে কাজ করছে না তা নয়। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আর ঢাকায় আসা নিন্মবিত্ত মানুষের হয়রানী ঠেকাতে হলে আইনের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে এবং চুক্তি ছাড়া বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য খাস জমিতে হাউজিং প্রকল্প করতে হবে: ভাড়াটিয়া ঐক্য পরিষদ
ভাড়াটিয়া ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. আশরাফ আলী হাওলাদার বলেন, “এলাকাভিত্তিক যে বাড়ি ভাড়া রেট আছে তা কার্যকর করতে হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খাস জমিতে হাউজিং প্রকল্প ও কলোনি নির্মাণ করে কিস্তির ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হবে। বাড়ি ভাড়া আদায়ে বাড়িওয়ালারা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। অথচ রসিদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ভাড়া পরিশোধ করলে সরকার রাজস্ব পাবে। তাই বাড়ি ভাড়ার টাকা রশিদ ও ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।” এ ছাড়াও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করাসহ সব ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র প্রদান ও বাড়ি ভাড়া সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখভালের জন্য প্রত্যেক থানায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি গঠন করারও দাবি জানান তিনি।

‘আবাসন বন্ড’ প্রবর্তনের চিন্তা করা যেতে পারে: সিরাজুল ইসলাম
নগরবিষয়ক গবেষক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, স্বল্প খরচের বাড়ি সাধ্যের মধ্যে আবাসনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এ লক্ষ্য অর্জনে বাড়ির নির্মাণ ব্যয়, নিবন্ধন খরচ কমানোর উপায় খুঁজে বের করা দরকার। বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানো, ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো এবং ফ্ল্যাটের মূল্যের ৯০-৯৫ শতাংশ ঋণের জোগান দেওয়া গেলে বেশিসংখ্যক মানুষ বাড়ি কিনতে আগ্রহী হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিতে গেলে ব্যাংকের আমানতের ওপর চাপ পড়তে পারে; সে ক্ষেত্রে ‘আবাসন বন্ড’ প্রবর্তনের চিন্তা করা যেতে পারে। কেনা বাড়ি ব্যাংকের কাছে জামানত থাকায় আবাসন খাতে ঋণখেলাপি হওয়ার সুযোগ কম।

মেয়ের প্রার্থীদের ইশতেহারে ভাড়াটিয়াদের অধিকার রাখার দাবি: 
ভাড়াটিয়ার পরিষদের সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার বলেন, রাজধানীতে বেশির ভাগ মানুষই ভাড়া থাকেন। কিন্তু এই বিশাল ভাড়াটিয়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের কথা কোনও জনপ্রতিনিধিরা বলেন না এবং তাদের অধিকার রক্ষা করেন না। ভাড়াটিয়ারা নানাভাবে অধিকার বঞ্চিত। টাকা দিয়ে ভাড়া থাকেন। কিন্তু কোনও সুবিধা পান না। তাই এবার ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকল দলের প্রার্থীদের নির্বাচনি ইশতেহারে ভাড়াটিয়াদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। দাবিগুলো হলো- ১. ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত বাড়িভাড়া রেট কার্যকর করতে হবে। ২. বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ কার্যকরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ৩. অযৌক্তিক বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে। ৪. ইচ্ছামত বাড়ি ভাড়ার অগ্রিম নেয়া বন্ধ করতে হবে এবং ৫. ভাড়াটিয়াদের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

আইনে কী আছে?
বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে সরকার প্রথম বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন হলেও দেশের কোথাও তা কার্যকর হয়নি। ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করে। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিবিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে ২০১০ সালে হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই আদালত রায় দেন। রায়ে বলা হয়, বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেকে সুরক্ষা দেয়া যাচ্ছে না। এটি কার্যকর করতে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। রায়টিতে ভাড়া নির্ধারণের জন্য ছয় মাসের মধ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে এখনো বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ কমিশন গঠিত হয়নি।

ভাড়ার পরিমাণ: বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫(১) ধারায় মানসম্মত ভাড়ার কথা বলা হয়েছে। আইনে ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না। বাড়ির বাজারমূল্য নির্ধারণ করার পদ্ধতিও বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪-তে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে। এ ভাড়া বাড়ির মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের মধ্যে আপসে নির্ধারিত হতে পারে। আবার ভাড়া নিয়ন্ত্রকও নির্ধারণ করতে পারে। এটিকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঢাকা মহানগরীকে দশটি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে ক্যাটাগরিভিত্তিক সম্ভাব্য বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে।

ভাড়া বৃদ্ধি: বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, মানসম্মত ভাড়া কার্যকরী হওয়ার তারিখ থেকে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে। এ আইনের ৮ এবং ৯ ধারায় বর্ণিত রয়েছে, মানসম্মত ভাড়া অপেক্ষা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অধিক বাড়ি ভাড়া আদায় করলে সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের অপরাধের জন্য মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ আদায় করা হয়েছে তার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে বাড়ির মালিক দণ্ডিত হবেন এবং পরবর্তী প্রত্যেক অপরাধের জন্য এক মাসের অতিরিক্ত যে ভাড়া গ্রহণ করা হয়েছে তার তিনগুণ পর্যন্ত অর্থদণ্ডে বাড়ির মালিক দণ্ডিত হবেন।

অগ্রিম জামানত গ্রহণ: কোনো ব্যক্তি ভাড়ার অতিরিক্ত প্রিমিয়াম, সালামি বা জামানত ভাড়াটিয়াকে দেয়ার জন্য বলতে পারবেন না। ১৯৯১-এর ১০ ও ২৩ ধারা মোতাবেক বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রকের লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনোভাবেই বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়িভাড়ার অধিক কোনো ধরনের ভাড়া, জামানত, প্রিমিয়াম বা সালামি গ্রহণ করতে পারবেন না। তা হলে দণ্ডবিধি ২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দণ্ডিত হবেন।

ভাড়ার রসিদ প্রদান: এ আইনে বাড়ির মালিককে ভাড়ার রসিদ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এ রসিদ সম্পন্ন করার দায়-দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। রসিদ প্রদানে ব্যর্থ হলে ভাড়াটের অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

লিখিত চুক্তি: বাড়ি ভাড়ার চুক্তি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে করা যেতে পারে এবং প্রয়োজনে নিবন্ধন করে নেয়া যেতে পারে। এর ফলে অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। চুক্তিপত্রে ভাড়া, ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ি ছাড়ার নোটিশসহ বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে।

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2024 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon