‘বাংলাদেশে চলমান ইতিহাসচর্চার সংকট ও সৈয়দ আবুল মকসুদের সাধানা’ শীর্ষক আলোচনা সভা
‘আমি পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে লিখি।...কারণ বাংলাদেশ বিষয়ে লিখতে গেলে বাড়তি সেন্সরশিপের শিকার হতে হয়’। এমন মন্তব্য করেছেন লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ। গত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের ৭৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ।
ওই অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে চলমান ইতিহাসচর্চার সংকট ও সৈয়দ আবুল মকসুদের সাধানা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে লিখি। আসলে এটা একটা দুঃখের ব্যাপার। বাংলাদেশ বিষয়ে লিখলে অনেক অনেক বাড়তি সেন্সরশিপের শিকার হতে হয়। এই রকম অভিজ্ঞতার পর আমি ভেবেছি আর দেশের বিষয়ে লেখার প্রয়োজন নাই। এতটা নতজানু হওয়া সম্ভব নয়। এতটা করুণ জীবন কোন লেখকের হওয়া উচিত না। আমরা একটা কাঠামোগত সহিংসতার শিকার। এটা একটা সন্ত্রাসী অবস্থা’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন সমকালীন কিছু নিয়ে লিখতে গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা মনে পড়ে। ওই আইনের ভেতরে থাকা দাঁত ও নখ আমাদের কোন ধরনের কামড় দেবে তা অনুমান করা কঠিন। দেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম শক্তিশালী না হলে আর একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা না হলে আবুল মকসুদের মতো মানুষ তৈরি হবেন না; যাঁরা বহু মানুষ ও ঘটনার মধ্য দিয়ে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি তা তুলে ধরবেন’।
গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘আমি রুটি-রুজির জন্য ইতিহাস চর্চা করি। কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির পর ইতিহাস বিভাগ বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে চাকরি করা ছাড়া উপায় দেখছি না। তবে এই আইন-ই ইতিহাসচর্চায় একমাত্র বাধা নয়, আছে রাজনৈতিক বাধা, প্রাতিষ্ঠানিক বাধা’।
ইতিহাসচর্চার জন্য আর্কাইভ কোথায় প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এতো বছর পরও ইতিহাসচর্চার জন্য কোনও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি, সেখানে ইতিহাসচর্চার পথ কোথায়? এ ছাড়া আরও সংকট আছে; এগুলো প্রধান বাধা। এমন অবস্থায় ইতিহাসচর্চার জন্য আত্মজিঘাংসা প্রয়োজন, আত্মতৃষ্ণা প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি দরকার, তা হলো গণতন্ত্র’।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন