শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৫ তম মৃত্যু দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘‘যে দেশের জন্মের জন্য জাহানারা ইমাম নিজের সন্তানকে উৎসর্গ করেছিলেন সেই দেশেই তিনি দেশদ্রোহিতার মামলা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।” মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২৬ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হল কতৃক আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধের বিচার জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ফসল। তাকে ‘শহীদ জননী’ বলা হয় কারণ তিনি শুধু তার সন্তান রুমি হত্যার বিচার চাননি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকল শহীদের মা। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, আহত, ধর্ষিত সকল মা-বোনদের বিচার চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির প্রচণ্ড রোষানলে পড়েন। জাহানারা ইমামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেওয়া হয়। যদিও সে মামলা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয় কিন্তু এই মামলা’র বোঝা মাথায় নিয়েই তাকে পরপারে যেতে হয়।”
অধ্যাপক মেসবাহ কামাল হলের ছাত্রীদের উদ্দেশ্য বলেন ‘‘বিশ্বের ইতিহাসে জাহানারা ইমাম অন্যতম মা যিনি মাতৃ আবেগের উর্ধে উঠে নিজের সন্তান কে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন’’। শহীদ রুমি এবং জাহানারা ইমাম-কে এদেশের ইতিহাসের মানিক জোড় হিসেবে অভিহিত করে অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “শহীদ রুমি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি না যেয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন দেশ ‘মা’কে মুক্ত করার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেন তাদের এক হাত নিয়ে ইতিহাসের এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘শহীদের সংখ্যা ত্রিশ লক্ষেরও বেশী। ভারতের শরণার্থী শিবিরে ১৫ লক্ষাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছিলো এবং প্রতি পরিবারে কমপক্ষে ১ জন বা তাঁর বেশি সদস্য অপুষ্টি, মহামারী, খাদ্যাভাব এবং চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এরা-ও কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবে শহীদ। এজন্য এরাও শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হবে যারা ৩০ লক্ষের বাহিরে।”
জাহানারা ইমাম ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তার স্মরণে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাজল কৃষ্ণ দাস। আলোচনা অনুষ্ঠানে জাবি’র ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুর রহমান এবং নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক জুলফিকার মানিকসহ অনান্যরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা শিক্ষার্থীদের জাহানারা ইমামের লেখা ‘একাত্তরের দিনগুলি’ এবং আনোয়ার পাশার লেখা ‘রাইফেল-রোটি-আওরাত’ বই দুটি পড়ার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন