Bangla Runner

ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩ | বাংলা

শিরোনাম

বিশ্বের বৃহত্তম সাত স্টেডিয়াম যুদ্ধ লাগলেই কেন বাড়ে স্বর্ণের দাম? তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম বিতর্কের বিষয় ব্যাংক বিতর্কে শব্দ ব্যবহারে সচেতন হতে হবে একজন ভাল লেখক হতে চাইলে এক নজরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক নজরে সুন্দরবন পরাগায়ন কাকে বলে? শৈবাল কী?
Home / গল্প

বেড়াজাল

এম.এস.আই খান
শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১ Print


ঘুম ভাঙতেই ধপাস করে উঠল বুকের ভিতর। রাতে কি এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে আকাশ। না। দুঃস্বপ্ন নয় সত্যি। সব মনে পড়ল ওর। আর ভাবতে লাগল, পৃথিবীতে সৎ হলে, সত্যি ভালবাসলে কষ্টই কি তার প্রতিদান?  নাতো, আমিতো কাউকে মিথ্যে বলি নি। অলিক কল্পনায় কারও মনোরঞ্জন করিনি। তবে কেন এমন হল?

ছোট থেকেই মানুষকে নিয়ে কাজ করার, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন আকাশের। তাই সে সবসময় মনে মনে এমন একজন মানুষ খুঁজে ফিরে, যে তার মতকরে ‘মানুষকে’ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। আকাশ চায় স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে তাদের মাঝে, যাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যদিয়ে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গে।

আকাশ তার ‘স্বপ্ন’ নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। অসমাপ্ত অংকের মত, লেখার খাতায়, ডাইরির পাতায় পাতায়  তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনেক পরিকল্পনা করে। একদিন তার এক অসমবয়সী বন্ধু তাকে বলল, ‘‘তোর স্বপ্নটা সুন্দর, আমিও চাই এমন হোক আমাদের শহরটা,  যেখানে পথ চলতে যেয়ে পায়ের কাছে মানবতার বিপর্যয় দেখে  থমকে দাড়াতে হবে না। কিছু করার ক্ষমতা না থাকায় অসহায়ের মত যেন দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আর পথ চলতে না হয়। কিন্তু আমাদের দেশে  এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন। বাস্তবতা অনেক কঠিন, নির্মম, চিন্তা-ভাবনার বাইরে।’’

আকাশ বলল- ‘‘ভাই, আমিও জানি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন। কিন্তু তার পরেও আশা ছাড়ব না। হয়ত আমি যেভাবে স্বপ্ন দেখি সে ভাবে হুবহু সত্যি হবে না। তবে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু তো করতে পারি। স্বপ্নটা আরও দশজন যুবকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি। সমাজ যেভাবে আছে তার থেকে কিছুটা ভাল করার চেষ্টা করতে পারি।’’

আকাশ তার স্বপ্নের সমান বিশাল। সে বিশ্বাস করে যেদিন তার স্বপ্ন হারিয়ে যাবে, সেদিন সে পৃথিবী থেকে মিলিয়ে যবে ঐ দূর আকাশের নীলিমায়।  মাঝে-মধ্যেই তার স্বপ্ন তাকে ঘুমাতে দেয় না।

একদিন বিকেলে  জানালার পাশে বসে সে বাইরের সবুজ গাছ-পালা আর পাখিদের ছুটোছুটি দেখছিল। আর ফেইসবুকে ফারজানা হক নামে একটা আইডির প্রফাইল দেখছিল। প্রফাইলে সে মেয়েটার ফোন নাম্বার পেল।  হটস এ্যাপেও মেয়েটাকে পাওয়া গেল। আকাশ হটস এ্যাপে মেয়েটার সাথে পরিচিত হল। 

ফারজানার চোখে পৃথিবীর প্রতিটি শিশুই সুন্দর। সে তার জীবনটাকে উৎসর্গ করতে চায় সে সমস্ত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য যারা প্রতি রাতে ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যায় অথচ তারা আইনস্টাইনের মত মেধা নিয়ে জন্মেছে; পূর্ণীমার চাঁদ যাদের কাছে মনে হয় ঝলসানো রুটি! আকাশের সাথে মেয়েটার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কারণ আকাশ ঠিক এমন একজনকেই খুঁজছিল এতদিন ধরে।

প্রায়ই তারা অনেক গল্প করে। কখনও কখনও রাত ভোর হয়ে সকাল হয় তারপর উভয়ের ব্যালেন্স শূন্য হয়ে থামে তাদের অসমাপ্ত কথা! এ যেন রবি ঠাকুরের ছোট গল্পের মত, শেষ হয়েও হইল না শেষ! পৃথিবীর সব বিখ্যাত প্রেম কাহিনী যেমন, রোমিও-জুলিয়েট, দেবদাস, কিংবা হোসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপ; যেখানে নেই কোন জনমানুষ,  নেই কোন বাঁধা। কখনো আবার নিজেদের স্বপ্ন নিয়ে গল্প করে- আকাশ বড় হতে চায়, তত বড়, যত বড় তার স্বপ্ন। 

আর ফারজানা? ফারজানা হতে চায় গাইনি। প্রতিষ্ঠা করতে চায় দেশের সর্ববৃহৎ ‘‘মহিলা ও শিশু হাসপাতাল’’। যেখানে অসহায় নারি আর শিশুদের দেওয়া হবে স্বল্প খরচে চিকিৎসা। আর সে হবে ফ্লোরেঞ্জ নাইটেঙ্গেল অথবা মাদার তেরেসার মত ভালবাসার ফেরিওয়ালা।

ফারজানা ছিল হিন্দু পরিবারের মেয়ে! প্রকৃত  নাম অপরাজিতা ঘোষ! ফেসবুকে সে ছদ্মনাম দিয়েছিল ফারজানা! মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারের ছেলে আকাশ পুরো ঘটনা জানার পর ভাবলেশহীন হয়ে পড়ল। কারণ অপরাজিতাকে তার ভাল লাগলেও জীবন সাথী করা সম্ভব হবে না। 

অপরাজিতা জানত আকাশ ‘‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’’ কে অসম্ভব রকম ভালবাসে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে সে বাংলা নয় আইন নিয়ে পড়তে আগ্রহী। কারণ একটাই,  আকাশের স্বপ্ন  পূরণে সবচেয়ে সহায়ক বিষয় হবে আইন। যেমনটা পড়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রায়ত প্রধানমন্ত্রী লি কুয়াং ইউ। কিংবা যেমনটা ইচ্ছে ছিল মাহাথীর মুহাম্মদের।

কাকতালীয় হলেও সত্যি, আকাশের ‌‘বাংলা’ আর ‘আইন’ বিষয় দুটির ঠিক সমানুপাতিক তার এবং অপরাজিতার মধ্যকার  ভালবাসা। অপরাজিতাকে বাংলার মত ভালবাসলেও ধর্ম-জটিলতার কারণে অপরাজিতাকে বিয়ে করা হবে না আকাশের।

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2021 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon