উপাচার্যরা কেন সম্মান হারাচ্ছেন?
দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সময়ই নানা নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরাও পড়ছেন নানা সমালোচনার মুখে। ছাত্রবান্ধব না হয়ে অনেক সময়ই তারা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবান্ধব হয়ে যাচ্ছেন। কেন উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের সম্মানের পাত্র হতে পারছেন না? এ বিষয়ে ইতিহাসবিদ ও গবেষক মেসবাহ কামালের মতামত জেনেছেন- এম.এস.আই খান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল বলেন, তিনটি কারণে ভিসিরা অজনপ্রিয় হয়ে পড়ছেন এবং তারা সম্মান হারাচ্ছেন। প্রথমমত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ভিসি হিসেবে আসছেন না। দ্বিতীয়ত ভিসিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্মানজনক নয় এবং তৃতীয় হল নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের জবাবদিহিতার অভাব।
ব্যক্তিত্ব সম্মপন্ন মানুষ: ছাত্ররা স্বাভাবিকভাবে পছন্দ করে ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তার পাণ্ডিত্যের ওপর, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ওপর। আমাদের কি তেমন যোগ্য শিক্ষক নেই? আমাদের কি আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব নেই? আমাদের কি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষক নেই? আছে তো। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এবং বাহিরে সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন। কিন্ত তারা আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে রাজি নন।
নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্মানজনক নয়: আমাদের এখানে যে প্রক্রিয়ায় ভিসি নিয়োগ হচ্ছে সে প্রক্রিয়াটা অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ নয়। আমাদের এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪০টির মতো। এতগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেবলমাত্র চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন আছে। বাকিগুলো সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে একশোরও বেশি। যে চারটিতে স্বায়ত্তশাসন আছে সেখানে সরকারই মাঝে মাঝে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ ভেঙে পছন্দের লোককে বসাচ্ছে। যেমন- জাহাঙ্গীরনগরে অধ্যাপক ফারজানা দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ পেলেন।
তিনি ভিসি প্যানেল ভুক্তই ছিলেন না, সিনেটে যেভাবে নির্বাচন করে আসতে হয় তিনি সেভাবে আসেননি। কিন্তু সরকার তাকে পছন্দ করে তাই দিয়েছে। ছাত্ররাতো এই বিষয়টা বোঝে যে, তিনি নিজের যোগ্যতায় আসেন নাই, সরকারের পছন্দে এসেছেন। তখন তার (উপাচার্য) সম্মান কমে যায়। এই গেল স্বায়ত্তশাসিত চারটির অবস্থা বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি যে কি প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয় তার কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নাই।
এ ক্ষেত্রে আমলা, মন্ত্রী ও সরকারের চাটুকার এবং সরকারের কাছে যাদেরকে অনুগত ও বিশ্বস্ত বলে মনে হয় কেবলমাত্র তারাই নিয়োগ পায়। এই প্রক্রিয়াটা অসম্মানজনক। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শিক্ষকরা এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চান না। আসলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে গেলে উমেদারি করতে হয়। কাজেই যারা মন্ত্রী, সরকার ও আমলাদের উমেদারি করবে না তারা ভিসি হতে পারবে না। নিয়োগেই যেখানে সমস্যা সেখানে সম্মান থাকবে কি করে?
জবাবদিহিতার অভাব: আরকটা হল জবাবদিহিতা। কোন কোন ভিসি বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে, কর্মকর্তা-কর্মচারি নিয়োগে অর্থের লেনদেনের ঘটনা এখন বহুল আলোচিত। এমন অস্বচ্ছতা থাকলে সম্মান থাকে কি করে?