ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে অনেকেই মৃত্যুদণ্ড চালু করার দাবি জানিয়েছেন। বিশেষ করে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার পর ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনসহ ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বরং যে আইন রয়েছে তার বাস্তবায়নের প্রতি জোর দিয়েছেন।
বাংলা রানারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মতামত জানিয়েছেন। ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সুলতানা কামাল বলেছেন, “এটার উত্তর দিতে গেলে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু যে বিষয়টি এখানে লক্ষণীয় সেটা হল যে, একটা সমাজ যদি শুধু মাত্র শাস্তি দিয়ে অপরাধ কমাতে পারত তাহলে এতদিনে অনেক অপরাধ বিলুপ্ত হয়ে যেত পৃথিবী থেকে। কারণ অনেক অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আছে। কিন্তু সেই অপরাধগুলো যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা খুব কমে গেছে সে রকম কিছু নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। সেই জায়গায় যেটা প্রয়োজন সেটা হল, সামাজিক, সাংস্কৃতিকভাবে অপরাধের প্রতি মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করা এবং যারা অপরাধ করে তাদের এই জায়গায় নিয়ে আসা যে, তারা যেন জানতে পারে অপরাধ করলেও তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।”
তিনি বলেন, “কখনো কখনো কঠোর শাস্তির প্রয়োজন আছে। কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশি আমরা যেখানে কাঙ্খিতভাবে অপরাধ কমাতে পারছি না সেটার কারণ হল আমরা আইনের প্রয়োগটাই করতে পারছি না। যে আইন আছে সে আইনের প্রয়োগ নাই এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নাই। যারা অপরাধ করে তারা মনে করে যে, অপরাধ করে তারা পার পেয়ে যাবে। এই সংষ্কৃতি বদলানোটা অনেক বেশি জরুরি, মৃত্যুদণ্ড আরোপ করার থেকে।”
এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, “আর আমাদের যে নারী নির্যাতন দমন আইন আছে সেখানে ৯টা অপরাধের জন্য কিন্তু মৃত্যুদণ্ড রয়েছে। সেই অপরাধগুলো কিন্তু সেরকমভাবে কমানো যায়নি। যেমন ধর্ষণ করে হত্যা, এটার জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি রয়েছে। এটাও আমরা কমাতে পেরেছি? বরং এখন দেখা যাচ্ছে যে, ধর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে হত্যা বেড়ে গেছে আরো বেশি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে শুধু ধর্ষণ করেই শেষ হচ্ছে না অপরাধটা, ধর্ষণ শেষে হত্যা করছে। এরকম অপরাধের সংখ্যা কিন্তু কম ঘটেনি। কাজেই মৃত্যুদণ্ড দিলেই যে অপরাধ কমানো যাবে সেটা আমরা মনে করি না। জানি না এটা নিয়ে বিতর্ক হবে কি না, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমরা মৃত্যুদণ্ডটাকে শাস্তি হিসেবে অনুমোদনই করে না।’’
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন