হাসির রাজা গোপাল ভাঁড় পর্ব: ০১
বেশ কিছুদিন হলাে গােপাল ভাড়ের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মেয়ে-জামাই বেড়াতে আনার ব্যাপারে তার মুখে টু শব্দটি নেই। একদিন গােপালের বউ বলেই ফেলল, 'হ্যাঁ গাে, অনেকদিন তাে হয়ে গেল মেয়েটার বিয়ে হয়েছে, এখনও জামাই বাবাজিকে আনবার নাম করছ না। নতুন জামাইকে গিয়ে না আনলে সে কি আসবে ভেবেছ? যাও, তুমি গিয়ে জামাইকে নিয়ে এসাে।’
গােপাল কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, 'যা দিনকাল পড়েছে তাতে বাড়িতে জামাই আনা কি সহজ কথা? অনেক খরচের ব্যাপার। তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছে কেন? সে যাব একদিন।’
কিন্তু গােপালের বউ নাছােড়বান্দা। গােপালের কোনাে কথাই তার কানে ঢুকছে না। যেভাবেই হােক জামাইকে এবার আনতেই হবে। বউয়ের মেজাজ-মর্জি বলে কথা! অগত্যা বউয়ের মুখঝামটা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য গােপাল চলল জামাই আনতে।
জামাইকে সঙ্গে নিয়ে গােপাল যথাসময়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। বউও খুব খুশি। এরপর দিন কয়েক কেটে গেছে অথচ জামাই বাবাজী ফিরে যাওয়ার নামটিও উচ্চারণ করছে না! করবেই বা কেন, জামাই আদর বলে কথা! এদিকে বউয়ের ফাই-ফরমাস খাটতে খাটতে গােপালের প্রাণ যায় যায়। কাজকর্ম সব শিকেয় উঠেছে। অতিষ্ঠ হয়ে গােপাল ভাবল, জামাই বাবাজীকে এবার তাড়াতে হবে। এমন ওষুধ ঝাড়তে হবে যে, বাবাজী শ্বশুরবাড়ির পথ পর্যন্ত ভুলে যাবে।
গােপালের বাড়িতে বেশ ফলন্ত একটি লেবু গাছ ছিল। একদিন গােপাল জামাইকে ডেকে চুপিচুপি বলল, 'দেখ বাবাজি, আমি সব সময় বাড়িতে থাকি না আর এই সুযােগে কিছু ছ্যাচড়া চোর রােজ লেবু চুরি করে নিয়ে যায়। তুমি একটু গাছটার দিকে নজর রেখাে। চোর ধরতে পারলে তাকে কিছুতেই ছাড়বে না কিন্তু।’
শ্বশুরের কথা মতাে জামাই তার পর থেকে সব সময় নজর রাখছে। লেবু গাছের দিকে। চোর ধরতে পারলে শ্বশুরের কাছ থেকে বাহবা পাওয়া যাবে, সে কী কম কথা! গােপাল সারাদিন বাড়িতে কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে তার বউকে বলল, 'তাড়াতাড়ি ভাত দাও, রাজার বাড়ি যেতে হবে, জরুরি তলব এসেছে।’
বউ ভাতের থালা এগিয়ে দিতেই গােপাল বলল, 'পেটটা যেন কেমন করছে ! ভাবছি লেবু চটকে দুটো ভাত খাব। জলদি গাছ থেকে একটা লেবু তুলে নিয়ে এসাে তাে।'
অন্ধকার হয় হয় এমন সময় গােপালের বউ লেবু আনতে গেল। এদিকে শ্বশুরের কথামতাে জামাই চোর ধরার জন্য ঘাপটি মেরে বসেছিল লেবু গাছের কাছে। চোর ধরে শ্বশুরের কাছ থেকে বাহবা নিতেই হবে। জামাই বাবাজী দেখল, ও মা! শ্বশুরমশাই তাে ঠিক কথাই বলেছেন, ওই তাে চোর সারা গায়ে কাপড় জড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আসছে লেবু গাছের দিকে। জামাই চোরকে ধরার জন্য এগিয়ে গেল। যেই না লেবুতে হাত দিয়েছে অমনি জামাই এক লাফে এসে চোরকে সমস্ত শক্তি দিয়ে জাপটে ধরে 'চোর চোর' বলে চেঁচাতে লাগল।
জামাই বাবাজী এত দ্রন্ত, এত জোরে জাপটে ধরেছিল যে, গোপালের বউ কোনো কথা বলার সুযোগই পেল না। চেচামেচি শুনে গোপাল আলো হাতে নিয়ে সেখানে এসে যা দেখল তাতে তার পক্ষে হাসি চেপে রাখা দায়। কিন্তু এই সুযোগ কে হাতছাড়া করে? দু জনকে ওই অবস্থায় দেখে বলল, 'ছিঃ ছিঃ, তলে তলে এত! এইজন্যই বুঝি জামাইকে বাড়িতে আনার এত গরজ!'
কী বলবে শাশুড়ি-জামাই! শেষে কিনা এই বদনাম? লজ্জায় তারা মাথা নিচু করে রইল। অবস্থা বেগতিক দেখে জামাই সেই রাতেই পালিয়ে গেল। এরপর আর কোনোদিনই জামাই আনার কথা মুখে আনত না গোপালের বউ। অন্যদিকে জামাই বেচারাও শ্বশুরবাড়ি, যাবার কথা কখনও স্বপ্রেও ভাবতে পারতনা।