হিলি স্থলবন্দর
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পাইকারি পর্যায়ে কমেছে আলু ও পেঁয়াজের দাম। আমদানি অব্যহত থাকায় ও চাহিদা কমায় মানভেদে পণ্যদুটির দাম কমেছে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। গত কয়েক দিনের উর্ধ্বমুখীতার পর আবারো নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যের দাম কমায় খুশি বন্দরে পেঁয়াজ ও আলু কিনতে আসা ক্রেতারা। তবে বেশি দামে আমদানি করলেও চাহিদা কমে যাওয়ায় কম দামে পণ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আমদানিকরাকরা।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ইন্দোর ও সাউথের বেলোরি জাতের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বন্দরে সাউথের বেলোরি জাতের পেঁয়াজ গত সপ্তাহেও ৯০-৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৮২ টাকায়। আর ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৪-৭৫টাকা দরে, তিনদিন আগেও একই জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। এদিকে বন্দরে আলুর দামও এখন কমতির দিকে। কাটিনাল জাতের আলু গত সপ্তাহের ৩৬-৩৮ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েচ্ছে ২৯ টাকা দরে। এছাড়া প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকায়। তিনদিন আগেও একই জাতের আলুর দাম ছিল ৩৪-৩৫ টাকা।
বন্দরে আলু কিনতে আসা আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘তিনদিন আগেও এখান থেকে ৩৬-৩৮ টাকা কেজি দরে আলু কিনে বিভিন্ন মোকামে পাঠিয়েছি। কিন্তু আজ আলু কিনতে এসে দেখি আলু প্রকারভেদে ২৭-২৮ টাকায় নেমেছে। দাম কমায় সুবিধা হয়েছে। কিন্তু যেসব আলু গতকাল কিনে মোকামে পাঠিয়েছি সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণে সেগুলো বেশি দামে কেনা। এভাবে হঠাৎ করে দাম ওঠা-নামা করলে আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি হয়।’
হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা অপর পাইকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘পূজার পর থেকেই পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখী। ভারত পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে ৬০-৭০ টাকার পেঁয়াজ দাম ৮৫-৯৫ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। বাড়তি দামের কারণে মোকামগুলো পেঁয়াজ ক্রয়ের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় আবারো পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৭৫-৮২ টাকায় মিলছে। দাম কমের কারণে আমাদের কিনতে পুঁজি কম লাগছে।’
আলু আমদানিকারক আবু হাসনাত খান বলেন, ‘এখন যেসব আলু আমদানি হচ্ছে তা ভারতের হিমাগারে মজুদ করে রাখা আলু। হিমাগার থেকে আলু বের করার পর তা স্বাভাবিক হতে ১০-১২ ঘন্টার মত সময় লাগে। খোলা জায়গায় রেখে ভালোভাবে বাতাস দিয়ে আলুকে স্বাভাবিক করতে হয়। আর খারাপগুলো ফেলে দিয়ে বস্তায় ভরে রফতানির জন্য ট্রাকে লোড করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে হঠাৎ করে আলুর চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় এসব পদ্ধতি অনুসরণ না করেই রফতানি করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে আমদানিকৃত এসব আলু দেশে আসার পর প্রত্যেকটি বস্তা থেকে ৩-৪ কেজি করে পঁচা আলু বের হচ্ছে আর মানও খারাপ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে দেশের মোকামগুলো আমদানিকৃত ভারতীয় আলুর উপর থেকে আগ্রহ হারিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি অব্যাহত থাকায় দেশের বাজারে পণ্যটির সরবরাহ বেশ বেড়েছে। আবার আমদানির খবরে দেশের বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজগুলোও দাম কমার আশঙ্কায় সব আলু বাজারে ছেড়েছে। এতে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। আর হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পাইকার হিলি স্থলবন্দরে আলু কিনতে আসতো তারাও তেমন একটা আসতে পারছেন না।’ এ কারণে বিক্রি কমে যাওয়ায় দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘মৌসুমের শেষ দিক হওয়ায় ভারত ও দেশের গুদামগুলো পুরানো সব পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ষোলাপুর, কর্ণাটক, ইন্দোর ও সাউথে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। এ কারণে ভারতের স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে। এসব কারণে হিলিতে পণ্যটির সরবরাহ বাড়ার পাশাপাশি দামও কমেছে।’
তিনি জানান, অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামে পেঁয়াজ পাঠানো কমে গেছে। এতে চাহিদা কমায় দাম কমছে। দেশীয় যে পেঁয়াজ মণপ্রতি ৩ হাজার ৮০০ টাকায় উঠে গিয়েছিল, তা এখন কমে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় নেমেছে। কেজি প্রতি ৫ টাকা করে কমে গিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামেও।