বিতর্ক হচ্ছে একটি দ্বন্দ্বমূলক শিল্পকলা। যুক্তি না থাকলে তর্ক চলতে পারে কিন্তু বিতর্ক চলে না। বাংলায় 'বিদ্যাবুদ্ধি' নামে দুটি শব্দকে একত্রে বলার রীতি রয়েছে। এই বিদ্যা ও বুদ্ধির সংযোগ সুন্দরভাবে ঘটে বিতর্কে।
বিতর্ক একজন মানুষকে নতুন কিছু শেখায় নতুনভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা দেয়, দেয় কথা বলার আত্মবিশ্বাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সাধারণত তিন দফা বিতর্ক হয়। ১৯৯২ সালে শেষ বিতর্ক মোকাবেলার আগে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বুশ হোয়াইট হাউজ থেকে ছুটি নিয়ে বিতর্কশাস্ত্র বিষয়ক বই ঘাটাঘাটি করেছেন।
বিতর্কের ক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয়, তা হল- আমরা সাধারণত গান শোনার পরে বলে থাকি শিল্পীর গলা ভালো, আবৃত্তিকারের কন্ঠ ভালো।কিন্তু ভালো বিতর্ক শেষে বলি বক্তার যুক্তি ভালো। সুতরাং বিতার্কিকদের কথা বলতে হবে যুক্তিসহ। তবে বক্তব্যের শুরুতেই আমি যুক্তি খন্ডন করছি এরকম কাঠখোট্টা বাক্য না, বলা উত্তম। বক্তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সম্বোধনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত না হয়। যেমন অনেকেই "মাননীয় স্পিকার বা মাননীয় সভাপতি" এ জাতীয় সম্বোধন বারবার করলে বক্তব্য শ্রুতিমাধুর্যতা হারায়।
২.
বক্তৃতার চেয়ে দৃষ্টান্ত উত্তম। প্রতিটি যুক্তির পাশে যদি আমরা উপযুক্ত উদাহরণ দাঁড় করাতে পারি তাহলে তা প্রতিটি সৈনিকের হাতে এক একটা অস্ত্রের মতো মনে হবে।
বিতর্ক চর্চাকে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ তুখোড় সংসদ হওয়ার জন্য এক অগ্রিম প্রস্তুতির কর্মশালা। যারা বিতর্ক করতে এসেও নানাভাবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবেন না, তাদেরকে মনে রাখতে হবে "নিরাশ মানুষ বিতর্ক করতে পারে না"।
বিতর্কের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। প্রতিদিনের খবরের কাগজের সম্পাদকীয় পাতা পড়তে হবে সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থব্যবস্থা, পরিবেশ ও ইতিহাস বিষয়ক বই পড়তে হবে। অনেক বিতার্কিকেরই কথা বলার জড়তা থাকে না কিন্তু বক্তব্যে তথ্যের অভাব থাকায় ভাল করতে পারেন না। তাদের জন্য বই, পত্রিকা পড়া ও বেশি বেশি জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক দেখা ছাড়া অন্য উপায় নেই।
বিতর্কের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হল বিচার করা। বিরুপাক্ষ পাল বিচার করা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, 'বিচারক হওয়ার আরাম আছে, কথা বলতে হয় না। কষ্ট আছে, পরে পরাজিত ভক্তদের রক্তচক্ষুর জবাবদিহি করতে হয়।
বই সম্পর্কিত তথ্য: নাম- বিতর্ক ভুবন, লেখক- বিরূপাক্ষ পাল, প্রকাশক: প্রথমা, মুদ্রিত মূল্য: ৪০০ টাকা।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন