ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইসিসি) সম্প্রতি নিয়মনীতিতে অনেকগুলো পরিবর্তন এনেছে। আইসিসি আগেই ঘোষণা দিয়েছিল যে, নতুন নিয়মগুলো ১ অক্টোবর ২০২২ থেকে কার্যকর করা হবে। সে হিসেবে নতুন নিয়মে প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়ালো নারীদের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের ম্যাচের মধ্য দিয়ে। আসুন জেনে নিই আইসিসির নতুন ০৯টি নিয়ম কি কি-
ক্রিকেট বলে লালা ব্যবহারে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা: করোনার সময় সংক্রমণরোধ করার জন্য ক্রিকেট বলে লালার ব্যবহার সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল আইসিসি। কোনো দলের কোনো বোলার কিংবা ফিল্ডার এমন ভুল একবার করলে তাদের সতর্ক করে দেয়া হতো। দ্বিতীয়বার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটলে বোলার ও অধিনায়ককে দেয়া হতো শাস্তি। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক। তবুও বলে লালার ব্যবহার স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করল আইসিসি।
পিচ ব্যবহারের ব্যাটারের অধিকার: যে কোনো ডেলিভারি মোকাবিলা করার জন্য ব্যাটারের ব্যাট অথবা শরীরের যে কোনো অংশ পিচের ভেতরেই থাকতে হবে। অন্যথায় এটি ডেড বল হিসেবে গণ্য হবে। একইভাবে বোলারের কোনো ডেলিভারি যদি ব্যাটারকে পিচের বাইরে নিয়ে যায় তাহলে সেটি ‘নো বল’ ডাকা হবে।
ব্যাটিং শুরুর জন্য কমল সময়: এখন থেকে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে কোনো ব্যাটার আউট হওয়ার পর দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটারকে ক্রিজে এসে প্রথম বল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। অতীতের নিয়মে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে ব্যাটাররা তিন মিনিট সময় পেতেন। তবে অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে কিন্তু তিন মিনিটই থাকছে।
ক্যাচ আউটে ব্যাটারের অবস্থান: এতদিন ধরে চলে আসা নিয়মে ক্যাচ আউটের সময় বলটি ফিল্ডারের হাতে বন্দী হওয়ার আগে দুই ব্যাটার নিজেদের ক্রস করে ফেললে নতুন ব্যাটার নন স্ট্রাইক প্রান্ত খেকে খেলা শুরু করেন। তবে এখন থেকে নতুন নিয়মে আর এটি হবে না। নতুন ব্যাটার সবসময় আউট হওয়া ব্যাটারের প্রান্তে এসে ব্যাটিং শুরু করবেন। অর্থাৎ স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকেই ব্যাটিং করবেন।
ফিল্ডারদের জায়গা পরিবর্তন: কোনো বোলার তার রান-আপ শুরু করে দেওয়ার পর ফিল্ডিং দল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারবে না। নতুন নিয়মে এটি ম্যাচ কমিশনারের সামনে এলে এ বার থেকে ফিল্ডিং দলকে পাঁচ রান পেনাল্টি দেওয়া হবে, পাশাপাশি সেই ডেলিভারিটি ‘ডেড বল’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
স্ট্রাইকারকে রান আউটের চেষ্টা বাতিল: এত দিন ধরে চলা নিয়মে কোনো বোলার যদি বোলিং করার সময় পপিং ক্রিজে ঢোকার আগেই দেখেন স্ট্রাইকিং প্রান্তের ব্যাটার ডাউন দ্য উইকেটে চলে এসেছে, তাহলে বল না করে থ্রো করে ব্যাটারকে রান আউট করতে পারে। নতুন নিয়মে এই চেষ্টা করা যাবে না। এটি করা হলে ডেলিভারিটি ‘ডেড বল’ ঘোষণা করা হবে।
‘হাইব্রিড পিচ’ ব্যবহারের অনুমোদন: এখন থেকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে যে কোনো একদিনের ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ‘হাইব্রিড পিচ’ ব্যবহার করা যাবে। এতদিন ধরে শুধুমাত্র মহিলাদের একদিনের ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ‘হাইব্রিড পিচ’ ব্যবহারের অনুমতি ছিল। কোনো টুর্নামেন্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পিচের ব্যবহার ঠিক রাখার জন্য এ বার থেকে ‘হাইব্রিড পিচ’ তৈরি করার অনুমোদন দেওয়া হল। আসলে ‘হাইব্রিড পিচ’ বলতে বোঝায় কৃত্রিম পিচ। এমন পিচ সাধারণত প্রাকৃতিক ঘাস ও সিনথেটিক ফাইবারের সমন্বয়ে বানানো হয়। ‘হাইব্রিড পিচ’-এ আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া হয় এটি স্পিন/পেস/ব্যাটিং সহায়ক হবে কি না।
নন স্ট্রাইকারকে মানকাডিং আউটের বৈধতা: এত দিন ধরে মানকাডিং আউটকে স্পিরিট পরিপন্থী বিবেচনা করা হতো। এই ধরনের আউট নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। এমনকি ক্রিকেটের নিয়মে এটিকে অনৈতিক হিসেবেও উল্লেখ করা রয়েছে। তবে এই অবস্থান থেকে সরে এসেছে আইসিসি। এখন থেকে মানকাডিং আউটও সাধারণ রান আউটের মতোই গণ্য হবে।
ম্যাচ চলার সময় একদিনের ম্যাচে পেনাল্টি শুরু: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্লো ওভার রেটের পেনাল্টি ম্যাচের মধ্যেই দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ করতে না পারলে বৃত্তের বাইরে একজন কম ফিল্ডার নিয়ে খেলতে হয় ফিল্ডিং দলকে। চলতি বিশ্বকাপ সুপার লিগ শেষে একদিনের ক্রিকেটেও এই নিয়ম বলবৎ হবে।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন