ইসলামে মানুষের হককে এতটাই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যে, ‘অন্যের হক নষ্ট করলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না হকদার বান্দা তা মাফ করেন।’ এমন কী কেউ যদি ইসলামের পথে জীবনও উৎসর্গ করে থাকেন অর্থাৎ শহিদ হন, তিনিও এই ক্ষমা পাবেন না। এক হাদিসে হজরত মুহাম্মদ ছল্লাল্লাহু য়ালাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ শহিদের যাবতীয় ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু ঋণ মাফ করবেন না। কারণ, এটা বান্দার হক।’
মানুষের হকের বিষয়ে আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সূরা নিসা’র ১০ নং আয়াতে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘আর যারা অন্যায়ভাবে এতিমদের সম্পদ আত্মসাৎ করে তারা মূলত তাদের পেটে আগুন ঢোকাচ্ছে। অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’
সহিহ বুখারির ২৪৪৯ নং হাদিসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে— প্রিয় নবি (সঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোনো বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার থেকে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোনো দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) বা দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকবে না। যদি তার সৎকর্ম থাকে তাহলে তার সৎকর্ম থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে রাখা হবে। আর তার সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে জুলুমের সমপরিমাণ নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’
সহিহ বুখারির হাদিস নং ২৪৫৩ এবং সহীহ মুসলিমের ১৬১২ নং হাদিসে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহার বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে— মহাননবী (সঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত পরিমাণ সম্পত্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন ৭ তবর (স্তর) জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে’।’
তাই এ ধরনের গুরুত্বর অন্যায় কখনো করে ফেললে তার জন্য তওবা করতে হবে। আর এ ধরনের পাপ থেকে তওবা করার বিধান হচ্ছে, যার হক নষ্ট করেছেন তার পাওনা তাকে বুঁঝিয়ে দেয়া অথবা তার কাছ থেকে মাফ চাওয়া। হকদার বা পাওনাদার ব্যক্তি ক্ষমা না করা পর্যন্ত এ ধরনের অপরাধের তওবা কবুল হবে না।
রিয়াদুস সালেহীন —এর ৩৩ নং পৃষ্ঠায় এবং ফাতাওয়া লাজনাতুদ দায়েমা —র ৪ অধ্যায় ১৬৫ পৃষ্ঠায় অন্যের হক নষ্টকারী কোনো ব্যক্তি যদি কখনো তওবা করতে চান, তাহলে তার তওবা কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে ০৪টি শর্তের কথা বলেছেন ইমাম নববী (রহ.)। তিনি বলেন—
তওবা কবুলের প্রথম শর্ত হচ্ছে, গুনাহ ত্যাগ করা। দ্বিতীয়ত, পূর্বের অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। তৃতীয়ত, একই গুনাহে পুনরায় না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া এবং চতুর্থত, হকদারকে তার হক বুঝিয়ে দেওয়া বা পৌঁছে দেওয়া। যদি এই ০৪টি শর্তের একটিও অপূর্ণ থাকে তবে তওবা যথাযথ হবে না।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন