Bangla Runner

ঢাকা , সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | বাংলা

শিরোনাম

বিখ্যাতদের ১০ উক্তি টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চাঁদাবাজ বদল হয়েছে, চাঁদাবাজী সিস্টেমের কোনো বদল আসেনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি রম্য বিতর্ক: ‘কুরবানীতে ভাই আমি ছাড়া উপায় নাই!’ সনাতনী বিতর্কের নিয়মকানুন গ্রীষ্ম, বর্ষা না বসন্ত কোন ঋতু সেরা?  বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা পাঠানোর ই-মেইল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৫ মসলা Important Quotations from Different Disciplines
Home / ধর্মশালা

কুরআনের আলো ছড়িয়ে পড়ুক মুমিনের জীবনে

রানার ডেস্কঃ
শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ Print


73K

একজন কুরআন গবেষক বড় আফসোস করে বলেছিলেন, পৃথিবীর সব ধর্মীয় গ্রন্থ বিকৃত হয়ে গেছে, একমাত্র কুরআনই অবিকৃত অবস্থায় দুনিয়ার বুকে আলোর মশাল হাতে হেদায়াতের নুর বিলাচ্ছে।

এ বিবেচনায় মুসলমানদের মতো সৌভাগ্যবান জাতি আর একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কথা ছিল কুরআনের আলোয় পথ চলে বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে মুসলমান। পৃথিবীর নানা জাতি-গোষ্ঠী কুরআনের ছায়ায় স্বস্তির-শান্তির নিশ্বাস ফেলবে।

আফসোস! মুসলমান আজ কুরআন পড়ে না, কুরআন বোঝে না, কুরআন গবেষণা তো সেই কবেই বন্ধ হয়ে গেছে! তাই তো এক কালের বাদশাহ জাতি মুসলমান আজ গোলামির লাঞ্ছনা নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবনযাপন করছে। মূলত জীবন থেকে যখন আল্লাহ হেদায়াতের নুর ছিনিয়ে নেন তখই বান্দার জীবনে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার অন্ধকার নেমে আসে। সে অন্ধকার এতই কালো যে-আলো নিভে গেছে সেটিও বান্দা বুঝতে পারে না!

সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন-‘মাছালুহুম কামাছা লিল্লাজিসতাওকাদা নারা, ফালাম্মা আদাআত মা হাউলাহু জাহাবাল্লাহু বিনুরিহিম ওয়াতারাকাহুম ফি জুলুমাতিল্লা ইউবসিরুন।

অর্থ : ওদের উপমা হচ্ছে এমন ব্যক্তির, যে আগুন জ্বালাল। আগুনে চারপাশ আলোকিত হওয়ার পরই আল্লাহ সে আলো সরিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওরা ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেল। অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখার থাকল না।’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত ১৭।)

কুরআনহারা বান্দার জীবনে কীভাবে দুর্দিন নামে সে চিত্র একটি উদাহরণের মাধ্যমে এঁকেছেন আল্লাহতায়ালা। আয়াতে ‘ওদের উপমা’ বলতে কুরআনহারাদের কথা বলা হয়েছে। প্রিয় পাঠক! চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন আজ থেকে চৌদ্দশ বছর আগের মরু আরবের গভীর রাতের দৃশ্য।

চাঁদহীন আকাশ। একটি তারকাও দেখা যাচ্ছে না। এমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে একদল মানুষ ভয়ে তটস্থ। যে কোনো মুহূর্তেই শত্রু আক্রমণ করতে পারে কাফেলা। কানে আসছে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের গর্জন। এমন ভয়ংকর অন্ধকারে এক ব্যক্তি আগুন জ্বালাল। চারপাশ আলোয় ভরে উঠল। সবাই খুশি।

যে যার মতো রাতের কাজে মন দিল। কেউ রান্না করছে। কেউ গোছগাছ করছে। হিসাব মিলাচ্ছে কেউ। কেউ বা আবার আড্ডা জমিয়েছে। হঠাৎ দপ করে আগুন নিভে গেল। যে যেখানে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই ঘোর অন্ধকারে ডুবে গেল। অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মুখে না বললেও সবাই বুঝতে পারছে ক্ষণিকের আলোটুকু তাদের প্রতি ছিল উপহাসের। কাজ শেষ হলো না, আলোও আসছে না-এক সীমাহীন যন্ত্রণায় তারা হাবুডুবু খাচ্ছে।

মোটা দাগে এ হলো আয়াতে বলা উপমার সারকথা। আসলে অন্ধকারে ডুবে থাকা ওই কাফেলা হলো তারা যারা আল্লাহর আয়াত তথা কুরআন বিশ্বাস করেনি, জীবনে বাস্তবায়নও করেনি। শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ দিয়েছেন কুরআন, কিন্তু তারা কুরআন বাদ দিয়ে নিজেরাই জীবনের নিরাপত্তা ও শান্তির ভার গ্রহণ করেছে। এক ব্যক্তি আগুন জ্বালিয়েছে, আর তারা ওই আলোর প্রতি হুমড়ি খেয়ে পড়ল। কপাল যখন পোড়ে এভাবেই পোড়ে। ওদের জানাছিল না, আগুন যেই জ্বালাক না কেন, আগুনের মূল নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে। আল্লাহ আলো নিয়ে গেলেন।

কুরআনের উপমা সৌন্দর্যটি উপভোগ করার মতো। তারা জ্বালিয়েছে ‘আগুন’, আল্লাহ নিয়ে গেলেন ‘আলো’। আরবি ‘নার’ অর্থ আগুন আর ‘নুর’ অর্থ আলো। গবেষকরা বলেন, নার তথা আগুনের ভেতর দুটি জিনিস থাকে-‘ইশরাক’ ও ‘ইহরাক’। ইশরাক মানে হলো নরম বা হালকা আলো। আর ইহরাক মানে হলো তাপ। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা তাদের আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে দিলেন না, বরং আগুনের আলো নিয়ে গিয়ে তাপ রেখে দিলেন। এমনিতেই মরুভূমি, তার ওপর যদি থাকে আগুনের তাপ তা হলে কী সীমাহীন দুর্ভোগ তা চোখ বন্ধ করেই অনুভব করা যায়।

আরবি ভাষায় আলো বোঝানোর জন্য আরেকটি শব্দ আছে ‘দুউন’। গবেষকরা প্রশ্ন করেছেন, আয়াতে দুউন ব্যবহার না করে নুর ব্যবহার করা হলো কেন। আগেই বলেছি, আয়াতে নুর বলতে ইশরাক তথা মৃদু আলো বোঝানো হয়েছে। সূর্যের প্রথম আলো কোমল থাকে তাই আরবি ভাষায় সূর্য উঠার পরের অল্প কিছুক্ষণকে ইশরাক বলে। সূর্যের নরম আলোয় যে সালাত পড়তে হয় শরিয়তে তার নাম সালাতুল ইশরাক। নরম আলো শেষে আসে উজ্জ্বল বা প্রখর আলো। উজ্জ্বল আলোকে বলা হয় দুউন। সালাতুল ইশরাকের ওয়াক্ত শেষ হলেই শুরু হয় সালাতুদ দোহার ওয়াক্ত।

আয়াতে আল্লাহতায়ালা যদি বলতেন ‘জাহাবাল্লাহু বিদুইহিম’ অর্থাৎ আল্লাহ তাদের উজ্জ্বল আলো নিয়ে গেছেন, তাহলে বোঝা যেত-এখনো ক্ষীণ বা কোমল আলোটুকু রয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্য হলো, যারা কুরআনের নুর বাদ দিয়ে নিজের মনগড়ায় আলোয় পথ চলতে চায়, তাদের জন্য আগুনের উত্তাপ ও যন্ত্রণা ছাড়া আলোর ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে নুর শব্দটিই এখানে যথার্থ দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে।

ভাবনার বিষয়, একদল মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আগুন জ্বালিয়ে পেল তাপ ও যন্ত্রণা, অন্যদিকে সাইয়েদেনা ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের বিনিময়ে আগুনের ভেতর পেলেন ফুলের বাগান। এ দুটি ঘটনা পৃথিবাসীর সামনে একটি সহজ সত্য তুলে ধরে। দুনিয়ার মানুষ সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য উপকরণের ওপর নির্ভরশীল হয়, কিন্তু প্রকৃত সুখ শান্তি আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে।

আমরা মনে করি, অর্থ-বিত্ত-প্রাচুর্য সুখ-শান্তির চাবিচকাঠি। ভালো বেতন-ভালো চাকরি, দামি গাড়ি এসব থাকা সত্ত্বেও বান্দার জীবনে সুখ নামক পাখিটি অধরা থেকে যেতে পারে যদি তার ভেতর আল্লাহর নুর তথা আল্লাহ, আল্লাহর রাসূলের প্রেম না থাকে। আবার দিন আনে দিন খায় এমন গুরুত্বহীন মানুষটিও চরম সুখে চোখ বুজলেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না থাকা এ দিনমজুর আমাদের চোখে বোকা হলেও খোদায়ি আলোয় পথ চলে ঠিকই সে আখেরাতের সম্বল গুছিয়ে নিচ্ছে।

তাই তো ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, কুরআনের আলোহীন মানুষগুলোর দুনিয়া হয়তো কিছু সময়ের জন্য আলোকিত মনে হয়, মানুষের কাছে তারা মর্যাদা পায়, বাহ্যিক নিরাপত্তাও ভাগ্যে জোটে, কিন্তু মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের কবর অন্ধকারে পূর্ণ হয়ে যায়।

সে অন্ধকার হলো কুফরের অন্ধকার, নিফাকের অন্ধকার, বদ আমলের অন্ধকার, অন্যের হক মেরে খাওয়ার অন্ধকার। এ জন্যই আল্লাহতায়ালা নুর বা আলোর ক্ষেত্রে একবচন ব্যবহার করলেও অন্ধকারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন জুলুমাত বা বহুবচন। অর্থাৎ বান্দা যখন এক আল্লাহর এক আলো বাদ দিয়ে দেয়, তখন সে হাজার অন্ধকারে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে। আল্লাহতায়ালা আমাদের বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।- আনলাইন 

আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন

© Copyright -Bangla Runner 2024 | All Right Reserved |

Design & Developed By Web Master Shawon