হুমায়ূন আহমদকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা - সমালোচনা হয়েছে, কেউ কেউ তাঁকে বানিয়েছেন সাহিত্যের আইকন, কেউ বা নিন্দার ঝড়ে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁর জনপ্রিয়তার সাম্রাজ্য ; তবে তাঁকে উপেক্ষা করা সম্ভব হয়নি কারো পক্ষেই৷ বোদ্ধা সাহিত্য সমালোচক থেকে অপ্রাপ্তমনস্ক সাধারণ পাঠক কেউই তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। বারবারই ফিরে ফিরে তাঁর লেখার প্রসঙ্গ টানতে হয়েছে, জনপ্রিয়তার করতে হয়েছে সুলুকসন্ধান। মাত্র ২৪ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস লিখেই তিনি পাঠকসমাজে স্বকীয়তার ছাপ রাখতে সমর্থ হন। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি, করতে হয়নি বই ছাপানোর দুশ্চিন্তা, বরং প্রকাশকরাই তাঁর হাতে অগ্রিম অর্থ ধরিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত হয়ে অন্য কাজে মন দিতেন৷ এই যে হুমায়ূন আহমেদ অবলীলায় প্রকর্ষ ও পরাক্রমে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের অনন্য উচ্চতায় আরোহণ করেছেন সেটি কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার বিষয় এবং বিশ্লেষণের দাবি রাখে অনায়াসে৷ কারণ সময়ের অগ্রযাত্রায় যুগের আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন বদলায়। কথাসাহিত্যের আবির্ভাবই মূলত এই দরকারের দরুনই৷ কিন্তু হুমায়ূনকে এদেশের পাঠকরা ছাড়তে পারল না৷ বর্তমান আলোচনায় আমরা স্তবে স্তুতিতে ধূপধুনো দিয়ে পূজো করে ভক্তিরসসিক্ত প্রশংসার মালা গাঁথতে বসিনি ; নির্মম ভাষায় তাঁর লেখনীর তিরস্কার করে তাঁকে ইতিহাসের পেছনের সারিতে পাকাপোক্ত আসন দেয়ার অভিপ্রায়ও আমাদের নেই। আমরা একুশ শতকের আলোয় হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য পাঠ করে, তার কতিপয় বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে প্রবৃত্ত হয়েছি। সেইসূত্রে কেন তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছেন অর্থাৎ হুমায়ূনের সাহিত্যের আপেক্ষিক চিরন্তনতার রঞ্জনরশ্মির খোঁজ করা হয়েছে৷
হুমায়ূন আহমেদ কলম ধরেছেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অব্যবহিত পরেই৷ বলা যায় প্রথম উপন্যাস প্রকাশের পরেই করেছেন বাজিমাৎ। তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ' নন্দিত নরকে'। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস পাঠ করে আহমদ শরীফের মতো খ্যাতিমান সাহিত্য সমালোচকও উচ্ছ্বাস রোধ করতে পারেননি। অকুণ্ঠ চিত্তে তিনি উক্ত বইয়ের ভূমিকায় লেখেন,'' মাসিক মুখপত্রের প্রথম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যায় গল্পের নাম 'নন্দিত নরকে' দেখেই আকৃষ্ট হলাম। কেননা ঐ নামের মধ্যেই যেন একটি জীবনদৃষ্টি, একটি অভিনব রুচি, চেতনার একটি নতুন আকাশ উঁকি দিচ্ছিল।... পড়তে শুরু করলাম ঐ নামের মোহেই। পড়ে অভিভূত হলাম। গল্পে সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছি একজন সূক্ষ্মদর্শী শিল্পীর, একজন কুশলী স্রষ্টার পাকা হাত। বাঙলা সাহিত্যক্ষেত্রে এক সুনিপুণ শিল্পীর, এক দক্ষ রূপকারের, এক প্রজ্ঞাবান দ্রষ্টার জন্মলগ্ন যেন অনুভব করলাম।"আহমদ শরীফের লেখায় যে প্রশংসার পরাকাষ্ঠা আমরা দেখি, সেটি নবতরে ছন্দে স্পন্দিত হয়েছিল বছরের সেরা উপন্যাস হিসেবে লেখক শিবির পুরস্কার পাওয়ার পর৷
আমাদের দেশে এক সময় আদর্শ উপন্যাস রচিত হওয়ার প্রবণতা ছিল৷ উপন্যাসকে কিছু সাহিত্যরীতি ও তত্ত্বের আলোকে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই কৃতার্থ হতেন লেখক। তাতে জীবনের যোগ থাকুক বা না থাকুক। হুমায়ূন আহমেদ ঠিক এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিলেন দারুণভাবে৷ তিনি এদেশের পাঠকগোষ্ঠীর নার্ভটা ধরতে পেরেছিলেন, চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন তাদের৷ এদেশে যা কিছু পঠিত হয় অন্তত গল্প উপন্যাস বা কবিতার তার অধিকাংশই পাঠ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন - মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা। আর মধ্যবিত্তের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা নিজেদের কথা বারবার বলতে ও শুনতে পছন্দ করেন৷ তাদের রোমান্টিক স্বপ্নাভিসারের সুযোগ নেই, আবার গ্রাম্য কৃষকের মতো একদম নিস্তরঙ্গ জীবন কাটানোও অসম্ভব। সেই ফাঁকটুকু পূর্ণ করার জন্য তাদের দরকার কিছু মালমশলা যাতে সময়টা হয়ে ওঠে উপভোগ্য, আর সেটি যদি হয় তাদের নিজেদের কথা, তাহলে তো আনন্দের তূণে যুক্ত হয় নতুন তীর৷ যুদ্ধের আলোড়নে এই মধ্যবিত্ত প্রচণ্ডভাবে আলোড়িত হয়েছিল। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি না ঘটায় ক্রমাগত হতাশা ও যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে হতে মধ্যবিত্ত - মানস আত্মকেন্দ্রিকতার মধ্যেই ঘুরপাক খেতে থাকে৷ একজন সাহিত্য বিশ্লেষক লিখেছেন,"স্বাধীনতা - উত্তর বাংলাদেশের উপন্যাসে মূলত মধ্যবিত্ত - মানসের বহুমুখী জটিলতার রূপায়ণ ঘটেছে। সমষ্টিবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিচিত্তের যন্ত্রণা, আত্মরতি, রিরংসা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের ট্রাজেডি এবং ব্যক্তিগত উপভোগচেতনার যোগফল হচ্ছে মধ্যবিত্ত জীবন৷... উপন্যাস যেহেতু মধ্যবিত্ত জীবনেরই শিল্পরূপায়ণ, সে - কারণে বাংলাদেশের উপন্যাসে উপরি - উক্ত সত্যেরই পুনরাবৃত্তিধর্মী বিন্যাস লক্ষ করা যায়।" এটি হুমায়ূনের ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। কারণ এ ধরনের ছাঁচে ফেলে বিবেচনা করলে নৈয়ায়িকের মুখস্থ বুলিই কপচানো হবে, আর এটা হুমায়ূন তো বটে সমালোচকেরও নিজের উপরে করা হবে চরম অবিচার। বরং এই জাতীয় প্রভাব এড়িয়ে নিজস্ব একটা পরিমণ্ডল গড়তে পেরেছিলেন বলেই পাঠকসমাজ তাঁকে গ্রহণ করেছিল নির্দ্বিধায়।
হুমায়ূন বাংলাদেশের নাগরিক মধ্যবিত্তের জীবনকে তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন৷ বাস্তবকে তিনি ইন্দ্রিয়সীমার মধ্যে রেখে দিয়ে, যা দেখেছেন সেটাই ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর লেখায়৷ চেনা দুনিয়ার সাথে সাথে জানা কথা গুলো শুনতে পেলে আমরা পরম পুলক অনুভব করি, আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়৷ এই সহজ জীবনের সরল গল্পগুলো উপস্থাপনের একটা বিশিষ্ট ভঙ্গি আবিষ্কার করতে সমর্থ হয়েছিলেন হুমায়ূন। সেখানে আনন্দ আছে, দুঃখ আছে, মিলন আছে, বিরহ আছে ; শতসহস্র খণ্ডে বিভক্ত গল্পগুলো একটু একটু করে জোড়া লাগিয়ে তাকে এমন একটা পরিণতি দিতে পারেন তিনি, যেটাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রসুন যদি নাও থাকে, তবুও বর্ণহীন - স্বাদহীন - গন্ধহীন তকমা এঁটে বাতিল করে দেয়া যায় না৷ আর চত্রিত্রগুলোকে এমনভাবে সাজান যেন তিনি নিজেই সেখানে উপস্থিত৷ সমাজে চলাচলের পথে যা যা ঘটে, উপরন্তু তাতে যখন কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে বিচিত্র এক ভাবনারাজির বায়োস্কোপ তৈরি হয়, পাঠক মুগ্ধ বিস্ময়ে তা গোগ্রাতে গিলতে থাকে৷ কারণ এতে বদহজমের কোনো সম্ভাবনা নেই, আত্তীকরণ হয় খুব সহজে৷
হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলার কাজটি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েছেন তাঁর দায়িত্ব। এর অধিক কিছু করার দাবি তিনি নিজেই কখনো করেননি৷ তাঁর সাফ কথা কেউ তো আমাকে অমুক ভাবনা বা তমুক চিন্তা কিংবা এই সমাজ ওই দর্শন ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব দেয়নি, কাজেই বাড়তি জোঁয়াল বহন করার কোনো অর্থই হয় না। একবার বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত অধ্যাপককে হুমায়ূন গল্প পাঠিয়েছিলেন৷ গল্পটি পাঠ করে অধ্যাপক জানিয়েছিলেন কাহিনি হিসেবে ভালো, তবে নিতান্তই অগভীর এবং লঘু। প্রকৃতপক্ষে সেটি ছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্প৷ চরিত্রের নাম বদলে হুমায়ূন তাঁকে দিয়েছিলেন। হুমায়ূনের সাফ জবাব, 'মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় যখন গভীরতার অভাব, তখন আমার লেখা অগভীর হলে আমার দুঃখ নেই৷' এইখানটাতেই তিনি ঢাকার অন্য লেখকদের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন৷ অন্যরা যেখানে সামাজিক বহির্জীবনে জীবনের বহুমুখিতার সন্ধান করেছেন, হুমায়ূন সেসব জটিল প্রহেলিকাময় অলিগলির মধ্যে না ঢুকে সরলভাবে ব্যক্তি বা পরিবারের কাহিনি বিবৃত করেছেন। জীবনকে বিমূর্ত করার কোনো চেষ্টা এখানে নেই, নেই জীবনের নির্দিষ্ট আধারকে সরিয়ে ফেলার প্রয়াস৷ সম্ভবত সে কারণেই হুমায়ূনের লেখাকে নানাভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। আর সাধারণ মানুষও চেনা জীবনের স্বাদ পেয়ে সেগুলোকে আঁকড়ে ধরেছে অবসরের সঙ্গী হিসেবে৷
নগরের মানুষ গ্রামে যায় সাধারণত ছুটি কাটাতে, চিরস্থায়ীভাবে থাকার জন্য নয়৷ হুমায়ূনের অধিকাংশ গল্প - উপন্যাসে এই বিষয়টিই সযত্নে রক্ষিত হয়েছে৷ নিজের ঢাকাকেন্দ্রিক অবস্থান ঘুরে ফিরে এসেছে তাঁর বিভিন্ন রচনায়৷ তবে বিশুদ্ধ গ্রাম নিয়েও লেখার দুঃসাহস দেখিয়েছেন হুমায়ূন৷ বাঙালি মুসলমানের অকৃত্রিম জীবন তাঁর সাহিত্যের স্থান দখন করেছিল প্রথমে, তারপর তাতে যুক্ত হয় বাঙালি হিন্দুর যাপিত জীবন। তিনি কোনো পক্ষপাতদুষ্ট মতাদর্শ থেকে হিন্দু - মুসলমান জনগোষ্ঠীর দিকে দৃষ্টি না দেয়ায় সেগুলোর যথার্থ স্বরূপ ধরতে পেরেছেন৷ একজন বিশ্লেষক জানিয়েছেন,"তিনি বাঙালি মুসলমানের অভিজাত সম্প্রদায়ের মুখ আঁকতে চেয়েছেন। বাংলা অঞ্চলের উপনিবেশ আমলের স্বাভাবিক বাস্তবতার কারণে এবং সাহিত্যিক ইতিহাসের কারণে স্বভাবতই তাঁর সামনে হাজির হয়েছে অভিজাত হিন্দুর মুখ৷ এ মুখের গড়ন রপ্ত করার শ্রম তিনি স্বীকার করেছিলেন৷"ঠিক এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গ্রামজীবন উপস্থাপনের জন্য সেটি দারুণভাবে পাঠকসমাজে গৃহীত হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের লেখকরা গ্রামজীবনের স্পন্দন যথার্থভাবে অনুভব করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়েছেন যার দরুন তাঁদের গ্রামজীবনের উপস্থাপন হয়েছে কৃত্রিম, জীবনবিচ্ছিন্ন এবং শোচনীয়ভাবে অত্যন্ত বাজে৷ নগরের বাইরের এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন তাঁদের কাছে যেন অলীক! নিস্পৃহভাবে গ্রামকে আনতে পারেননি তাঁরা। মধ্যবিত্তের জীবন রূপায়ণের যে ছক দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছিল, সেই একই যান্ত্রিক কৌশল প্রয়োগ করায় তাঁদের সাহিত্য নগরের রাজপথেই পথ খুঁজে পেয়েছে, মেঠো পথের সন্ধান আর পায়নি। কিন্তু হুমায়ূন সমস্ত শুচিতা ঝেড়ে ফেলে মাটি মাখানো হাতে খাবার খাওয়ার, মসজিদে ঢিল পড়লে জিনের ভয় পাওয়ার, শশ্মানের ধার দিয়ে যাওয়ার সময় রাম নাম জপ করার জীবন তীক্ষ্ণতর সাথে উঠিয়ে আনতে পারায় হয়েছেন অতুলনীয়৷
আমাদের বাংলা সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের অভিঘাত বদলে দেয় লেখকের মনোজগৎ। এটি আত্মময়তার বৃত্ত নামক স্থির গলি থেকে লেখককে নিয়ে যায় চাঞ্চল্যের রাজপথে। হুমায়ূন আহমেদ এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধ তাঁর সাহিত্যিক দর্শনে ঘটিয়েছে মৌলিক পরিবর্তন। যুদ্ধের কালো, নগ্ন রূপ ও ভয়াবহতা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি৷ ফলে একটা স্পষ্ট ধারণা নিয়েই এই বিষয়ে লিখতে পেরেছেন৷ হুমায়ূনের এটি একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য যে, ইতিহাসের প্রতি তিনি অবিচল সংলগ্ন৷ ইতিহাস বিকৃতির দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করা যায় না৷ তিনি দায় স্বীকার না করলেও, দেশ ও জাতির প্রতি শেষ পর্যন্ত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনাগুলোর বাস্তবতা রূপায়ণে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে৷ সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কিছু কারিশমা দেখিয়েছেন তিনি যেগুলো পাঠকরা খুব ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে৷ যেমন,'জোছনা ও জননীর গল্প' উপন্যাসকে তিনি ঠিক ৭১ টি দৃশ্যপটে বিভক্ত করেছেন৷ এখানে জীবন ও ইতিহাসকে সমীকৃত করে গভীর অন্তর্দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন তিনি৷
ভাষা প্রয়োগেও অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন তিনি৷ অযথা কাঠিন্য আনতে চাননি। একথা সত্য যে, তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যই মান উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ৷ এর কারণ তিনি অধিকাংশ লেখাকেই নির্ধারিত ফর্মার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতেন৷ অনুরোধের লেখাতে ঠিক সে ধরনের স্বতঃস্ফূর্ততা আসে না, যেটা আসে সৃষ্টির প্রেরণা থেকে৷ তবে হুমায়ূন যেহেতু ঢাকার বুকে তাঁর শক্ত সাম্রাজ্য স্থাপন করে ফেলেছেন তাই ফুল ঝরে গেলেও পাঠকরা সেই মালা ফেলতে পারেনি। তাঁর আগেই তিনি যে কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন লেখার দ্বারা, পাঠক তাতে যথেষ্ট মোহাবিষ্ট৷ অল্প পয়সায় যে হুমায়ূনের চার ফর্মার একটা বই পাচ্ছে, সে কেন গোরা পড়বে? লক্ষ্য যেখানে সময় কাটানো, সেখানে লেখার স্থূলতা বা সূক্ষ্মতা নিয়ে মাথা ঘামানো বাহুল্য৷ কাজেই হাতের কাছে মাথা না খাঁটিয়ে যেটা পড়তে পারছি সেটাই পড়ব - বাংলাদেশের অধিকাংশ পাঠকের এটাই বৈশিষ্ট্য৷ শিক্ষার হার এদেশে কোনোদিনই বেশি ছিল না৷ বর্তমানে হার বাড়লেও কমেছে মান৷ কাজেই আলু - পটলের দরে শিক্ষা (সার্টিফিকে) বিক্রি বন্ধ না করা গেলে প্রাপ্তমনস্ক পাঠক তৈরি করা সম্ভব হবে না৷ এতে করে হুমায়ূন আহমেদরা যে উপনিবেশ স্থাপন করেছেন, আমাদের তার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবেই থাকতে হবে৷
লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন আপনার মতামত লিখুন